বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫ ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫
 
জাতীয়
করিডোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কারও কথা হয়নি, হবেও না: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা





নিজস্ব প্রতিবেদক
Wednesday, 21 May, 2025
4:44 PM
Update: 21.05.2025
4:56:28 PM
 @palabadalnet

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

ঢাকা: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি এবং হবেও না।

আজ বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

খলিলুর রহমান বলেন, “করিডোর হচ্ছে জরুরি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। আমরা যেটা করছি, সেটা হলো যেহেতু রাখাইনে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা বা এইড যাচ্ছে না, জাতিসংঘ আমাদের এটুকুই বলেছে যে, আপনাদের সীমান্তের ওপারে এইড নিয়ে যেতে সাহায্য করবেন।”

“জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগীদের মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবে। আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমরা করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলিনি এবং বলব না,” যোগ করেন ড. খলিলুর রহমান।

তিনি আরও বলেন, “আরাকানের যে অবস্থা তাতে সেখানে করিডোরের কোনো প্রয়োজন নেই। করিডোর তৈরি করে সেখানে লোকজন আসা-যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারব না। প্রত্যাবাসনের কথা না বলতে পারলে, প্রত্যাবাসনের কৌশল নিয়েও কথা বলতে পারব না।”

“অনেকে বলছেন করিডোর নিয়ে আপনার কথা বলছেন। আমি বলব অস্তিত্ববিহীন জিনিস নিয়ে আমরা কি করে আলাপ করব,” বলেন তিনি।

করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর সাথে কোনও মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনও ফাঁকফোকর নেই।”

তিনি বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই, আর সেনাবাহিনীর সাথে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।”

গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সেই প্রসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, “ফরেন অ্যাডভাইজারের সাথে আমার রোজ কথা হয়। উনি করিডর শব্দটা বলেই কিন্তু সেটা কারেক্ট করেছিলেন, উনি পাথওয়ে বলেছিলেন। সেটা ছিল স্লিপ অব ট্যাং, সেটা পরে কারেক্ট করেছিলেন, উনি কিন্তু পরে সেটা আর কখনোই বলেননি।”

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, “এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা কেন, আমরা কারও চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সাথে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি অনুভব করতে পারছি না।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের যে প্রশ্নগুলোর জবাব ড.খলিলুর রহমান দিয়েছেন তার কয়েকটি এখানে প্রশ্ন-উত্তর আকারে তুলে ধরা হলো:
 
রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান কী? 

রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকটের কারণে সেখানে মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। ইউএনডিপির পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেখানে আসন্ন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ আশঙ্কা করছে যে, এমন পরিস্থিতি রাখাইন থেকে আরও মানুষকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করবে।

ইতোমধ্যেই মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে আরও বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। ইতোমধ্যেই এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝায় পরিণত হয়েছে। 

রাখাইন রাজ্যের মানবিক সংকট বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ মানবিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে শুরু করে। যেহেতু সংঘাতের কারণে সাহায্য সরবরাহের অন্যান্য সকল পথ বর্তমানে অকার্যকর, তাই বাংলাদেশই এখন একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প। প্রাথমিকভাবে চিন্তা করা হয়েছিল যে জাতিসংঘ তার চ্যানেলের মাধ্যমে রাখাইনে সহায়তা বিতরণের ব্যবস্থা করবে এবং মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করবে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ মনে করে যে রাখাইনে সাহায্য প্রদান রাজ্যটিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির পথ প্রশস্ত করবে।

রাখাইনে সাহায্য প্রদানের ব্যাপারে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি কারণ এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি এবং সহায়তা প্রদানের জন্য বেশকিছু পূর্বশর্ত পূরণের প্রয়োজন যা বিশ্বের সবখানেই মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে একইভাবে পূরণযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে, সহায়তা প্রদানকারী এবং গ্রহীতাদের নিরবিচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার, সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য না করা, সহায়তাকে সামরিক উদ্দেশে ব্যবহার না করা এবং সশস্ত্র কার্যকলাপ স্থগিত রাখা।

আরাকান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের কারণ, সংকট মোকাবিলায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না।

আরাকান সশস্ত্র বাহিনী যখন মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন বাংলাদেশ সরকার তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। নিজ সীমান্ত রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ রাখা বাংলাদেশের কর্তব্য। এ কারণেই, বাংলাদেশ আরাকান সেনাবাহিনীর সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ সরকার রাখাইনে মানবিক সহায়তা প্রদান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং আরাকানের শাসনব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সকল স্তরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার স্বার্থে আরাকান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ রেখেছে।
বাস্তবিক প্রয়োজনেই আরাকান বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের এই যোগাযোগ। একইসঙ্গে, মিয়ানমার সরকারের সাথেও যোগাযোগ বজায় রাখছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা সংকট টেকসইভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশি কর্মকর্তারা সম্প্রতি বলেছেন যে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার প্রস্তাবে বাংলাদেশের সম্মতির জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেই শর্তগুলো কী কী এবং এই বিষয়ে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না।

প্রথম কথা হলো, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে একমত হতে হবে। পাশাপাশি আরাকান বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে যে সহায়তা প্রদানকারী এবং গ্রহীতাদের প্রবেশাধিকার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সহায়তাকে সামরিক উদ্দেশে যেন ব্যবহার না করা হয় এবং কোনো সশস্ত্র কার্যকলাপ যেন না ঘটে।

আরাকান বাহিনী রাখাইনের শাসনব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কাঠামোর সকল স্তরে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করে রাখাইনে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের অবিচল থাকতে হবে। তা না হলে এটিকে সারাবিশ্বে জাতিগত নিধন হিসেবে দেখা হবে, যা বাংলাদেশ মেনে নেবে না। আমরা এ বিষয়ে আরাকান বাহিনীর প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।

মানবিক সহায়তা প্রদানে নিরাপত্তা ঝুঁকি কী কী?

সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা যিনি প্রদান করেন এবং যিনি গ্রহণ করেন উভয়ের জন্যই নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। ল্যান্ডমাইন ও আইইডির মতো বিস্ফোরক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য হুমকি। সহায়তা প্রদানের আগে এই বিষয়গুলো সমাধান করা প্রয়োজন।

রাখাইনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সম্পর্কে আঞ্চলিক দেশগুলোর অবস্থান কী?

আসন্ন মানবিক বিপর্যয় থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো বিশ্ব সম্প্রদায়ের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। এই সংকট মোকাবিলায় সবাইকে একযোগে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার। স্থিতিশীল না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা একেবারেই কম।

আমরা সাম্প্রতিককালে আরও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আসতে দেখছি। যদি এটি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ কীভাবে এটি মোকাবেলা করার পরিকল্পনা করছে?

বাংলাদেশের পক্ষে আরও বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব না। ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরাকান বাহিনী এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘাতের সময় রাখাইন থেকে বিপুল পরিমাণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপরেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যদিও সেটি সংখ্যায় কম।

আরও মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ না করে সেটি ঠেকাতে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সরকার আরাকান বাহিনীকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর আর কোনো সহিংসতা, বৈষম্য এবং বাস্তুচ্যুতি যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আরাকান বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনসহ সকল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। গোটা বিশ্ব তাদের কার্যক্রম দেখছে। বাংলাদেশ আরাকান বাহিনীর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে কি না তা এই অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম এবং রোহিঙ্গাদের 

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com