ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, “আমরা যুদ্ধ জিতেছি, তবে শান্তি চাই।” একই সঙ্গে তিনি ভারতকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মতো সহাবস্থানের আহ্বান জানান। ‘অপারেশন বুনইয়ান উম মারসুস’-এর সাফল্য উদ্যাপন উপলক্ষে ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কাশ্মিরের পেহেলগামে হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করার পর দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ৬-৭ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়, যাতে বেসামরিক লোকজন নিহত হয়। এ ঘটনার পরবর্তী এক সপ্তাহে দুই পক্ষ একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, যার ফলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। দুই দেশের উত্তেজনা যখন চরমে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
ইউম-ই-তাশাক্কুর বা ধন্যবাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল ইসলামাবাদের পাকিস্তান মনুমেন্টে এক জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বক্তব্যের শুরুতে শহীদ ও তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধে জিতেছি, কিন্তু আমরা শান্তি চাই। আমরা শত্রুকে শিক্ষা দিয়েছি, তবে আমরা আগ্রাসনের নিন্দা করি। আমরা এই অঞ্চলে অন্য উন্নত দেশের মতো শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল পরিবেশ চাই।”
শাহবাজ শরিফ বলেন, ৯ ও ১০ মে রাতে সেনাবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ভারতের আগ্রাসনের ‘সীমা লঙ্ঘনের’ পর একটি পরিমিত প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাত আড়াইটার দিকে সেনাপ্রধান আমাকে সিকিউর লাইনে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সাহেব, অনুমতি দিন, যাতে শত্রুকে এমনভাবে আঘাত করি যে তারা আজীবন মনে রাখে’।”
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালানোর পর সেনাপ্রধান আবার বলেন, “আমরা জবাব দিয়েছি, এখন আমাদের কাছে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ আসছে। আপনার কী মত?” আমি বলেছি, “যখন শত্রুর মাথা ঘুরে যায়, তখনই আসল আঘাত; তাই এই প্রস্তাব গ্রহণ করুন।”’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রযুক্তি শত্রুকে হতবাক করেছে এবং মিত্রদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সাফল্যের ফলে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত-যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপান পর্যন্ত।
পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন আর কোনো বড় শক্তি পাকিস্তানের অগ্রগতির পথ আটকে রাখতে পারবে না। পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত গোটা জাতি এক হয়েছে সেনাবাহিনীর পেছনে দাঁড়িয়ে।”
শাহবাজ আরও বলেন, এই যুদ্ধ কিছুই অর্জন করেনি, বরং দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সমস্যাই বাড়িয়েছে। একমাত্র সমাধান হচ্ছে আলোচনা-শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীর মতো বসে সব বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে, যার মধ্যে প্রধান হলো জম্মু-কাশ্মির।
শাহবাজ শরিফ বলেন, “যদি আমরা স্থায়ী শান্তি চাই, তাহলে জম্মু-কাশ্মির ও পানিবণ্টন ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান চাই। একবার এগুলো মিটে গেলে বাণিজ্য, ব্যবসা, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতাসহ বহু সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।”