বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫
 
মতামত
লাঞ্ছিত নির্যাতিত জাতির রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা দাবিয়ে রাখা যায় না





পার্থ চট্টোপাধ্যায়
Monday, 16 October, 2023
5:06 PM
 @palabadalnet

গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসলীলা

গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসলীলা

আমাদের যৌবনে মুক্তিযুদ্ধের কোনো অভাব ছিল না। নকশালবাড়ির ডাক তো ছিলই, তার পরিণাম যা-ই হোক না কেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো। ও-দিকে আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ মোজাম্বিক আর অ্যাঙ্গোলায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে চলেছে কালো মানুষের মুক্তিসংগ্রাম। সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই হয়েছিল ভিয়েতনামে যেখানে খুদে কৃষক গেরিলাদের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তিকে হার স্বীকার করতে হলো ১৯৭৫ সালে। আমার এখনও মনে পড়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত সেই ছবি (তখন টেলিভিশন ছিল না)-সাইগনে মার্কিন দূতাবাসের গেট ভেঙে ভিয়েতনামের সৈন্যেরা ভিতরে ঢুকছে।

পাশাপাশি আর একটি মুক্তিযুদ্ধ আমাদের মনকে প্রবল ভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ন্যুরেমবার্গ বিচারসভা সূত্রে ইউরোপের ইহুদিদের উপর নাৎসি বর্বরতার কাহিনি চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পাপক্ষালনের উপায় হিসাবে ইউরোপের নেতারা বৃটিশ শাসনাধীন ফিলিস্তিনে ইউরোপের ইহুদিদের উপনিবেশ গড়ার ছাড়পত্র দিল। এক দিকে যখন এশিয়া-আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানপর্ব আসন্ন, ঠিক তখনই গড়ে উঠল পশ্চিম এশিয়ায় শ্বেতাঙ্গ ইউরোপিয়ানদের এক নতুন কলোনিয়াল বসতি। নাম ইসরাইল। খেসারত দিতে হলো কয়েক লক্ষ ফিলিস্তিনিকে যারা ১৯৪৮ সালে তাদের শত শত বছরের ঘরবাড়ি জমিজায়গা থেকে বিতাড়িত হয়ে ছড়িয়ে পড়ল নিকটবর্তী জর্ডাান, লেবানন, সিরিয়া, মিশর ইত্যাদি দেশের উদ্বাস্তু ক্যাম্পে।

অচিরেই প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হলো তাদের মধ্যে। সারা আরব দুনিয়ার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পেল তারা। ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে মিশর আর সিরিয়া যুদ্ধে নামল। খেপে খেপে সেই যুদ্ধ চলল প্রায় দুই দশক ধরে। আমেরিকা-সোভিয়েট ঠান্ডা লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে গেল সেই যুদ্ধ। কখনও আরব পক্ষের দিকে পাল্লা ভারী, আবার কখনও আমেরিকার সমর্থনে পুষ্ট ইসরাইলের দিকে। ১৯৬৭ সালে অতর্কিত আক্রমণে ইসরাইলের বিমানবাহিনী মিশরের প্রায় সব ক’টা সামরিক বিমানকে তাদের ছাউনিতে থাকা অবস্থাতেই ধ্বংস করে দিল। তার পর ছয় দিনের মধ্যে ইসরাইল জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান পাহাড় আর গাজা-সহ মিশরের সাইনাই উপদ্বীপ দখল করে নিল। ১৯৭৩ সালে প্রতি-আক্রমণে মিশরের সেনাবাহিনী ইসরাইলকে পর্যুদস্ত করে। ১৯৭৮-এর শান্তিচুক্তিতে গাজা বাদে সাইনাই উপদ্বীপ আবার মিশরের হাতে ফেরত আসে। কিন্তু জেরুসালেম-সহ জর্ডানের পশ্চিম তীর আর গাজা ইসরাইলের কব্জায় থেকে যায়।

ফিলিস্তিন জাতির রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রধান সংগঠন হিসাবে গড়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাত-এর নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। পিএলও ছিল বামপন্থী সেকুলার সংগঠন। বিশ্ব দরবারে তার প্রধান মুখপাত্র ছিলেন হানান আশরাফি নামে এক খ্রিস্টান মহিলা। আর এক প্রবক্তা ছিলেন পশ্চিমের প্রাচ্যবিদ্যার শিকড়সন্ধানী পণ্ডিত এডওয়ার্ড সাঈদ। তিনিও জন্মসূত্রে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান। অনেকেই জানে না, বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান গোষ্ঠীদের অন্যতম হলো আরবি-ভাষী ফিলিস্তিনি। তারা আরবি ভাষায় বাইবেল পড়ে এবং এখনও বেথলেহেমে যীশুর জন্মস্থানের দেখাশোনা করে।

পিএলও-র প্রতিরোধ শান্তিপূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, কারণ ইসরাইলের সেনাশাসকেরা ফিলিস্তিনে, অর্থাৎ জর্ডানের পশ্চিম তীর আর গাজায় কোনোরকম বিরোধী সমাবেশ বা বিক্ষোভ প্রদর্শন বরদাস্ত করত না। পিএলও আর অন্য ফিলিস্তিন সংগঠনেরা নানা বেআইনি পন্থায় ইসরাইলের দখলদারির বিরোধিতা করত। গোপন সংগঠনের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করে ইসরাইলের সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের উপর আঘাত হানাই ছিল তাদের প্রধান কর্মসূচি। ইসরাইলের জেলে বন্দি তাদের সহযোদ্ধাদের মুক্ত করার উপায় হিসাবে বিমান হাইজ্যাক করার পন্থা প্রথম আবিষ্কার করে পিএলও-র জঙ্গি বাহিনী ফতাহ্।

নানা প্রকাশ্য এবং গোপন কূটনৈতিক চেষ্টার পর ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিনের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত হয়। পিএলও ইসরাইলকে বৈধ রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ইসরাইল মেনে নেয় যে পিএলও হলো ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য প্রতিনিধি। আন্তর্জাতিক স্তরে এবার স্বীকৃত হলো, ফিলিস্তিনের মানুষ তাদের নিজস্ব জাতি-রাষ্ট্র পেতে চলেছে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। আজ ত্রিশ বছর পরেও পিএলও নেতৃত্বাধীন তথাকথিত প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। তার কারণ, একাধিক প্রশ্নে ইসরাইলের অনড় মনোভাব। 

এক, ফিলিস্তিনে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও জেরুসালেম শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে দাবি করা। জাতিসংঘের মতে জেরুসালেম আসলে দ্বিখণ্ডিত। তার পশ্চিম অংশ ইসরাইলের, পূর্ব অংশ ফিলিস্তিনের কিন্তু অন্যায় ভাবে তা ইসরাইল দ্বারা অধিকৃত। কিন্তু আন্তর্জাতিক মতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইল গোটা জেরুসালেমেই আধিপত্য বিস্তার করে সেখানে দেশের আইনসভা, প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ইত্যাদি স্থাপন করেছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন। বাইডেন প্রশাসন সেই সিদ্ধান্ত বদলায়নি। 

দুই, জর্ডান নদীর পশ্চিম পাড়ে ফিলিস্তিনের মধ্যে ইসরাইলি ইহুদিদের নিত্যনতুন বসতি স্থাপন। জাতিসংঘের একাধিক মঞ্চে এই বসতি স্থাপনকে স্পষ্টত বেআইনি ঘোষণা করা সত্ত্বেও গত কয়েক দশক ধরে তা যে শুধু ঘটে চলেছে, তা-ই নয়, ইসরাইলের সাম্প্রতিক দক্ষিণপন্থী সরকারের প্রকাশ্য প্ররোচনায় তা দ্রুততর হয়েছে। ইহুদি অভিবাসীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের গ্রামবাসীদের সংঘাত এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 
তিন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যদি গঠিত হয়, তবে যে লাখ লাখ ফিলিস্তিন উদ্বাস্তু আজও নানা দেশে রিফিউজি ক্যাম্পে বাস করছে, তারা কি দেশে ফিরে আসতে পারবে? এই প্রশ্নে ইসরাইলের দ্বিধাহীন উত্তর, কোনোমতেই না। কারণ, তা হলে ইসরাইলের মধ্যে এবং তার পারিপার্শ্বিক এলাকায় ইহুদিদের তুলনায় আরবদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। তেমন হলে, ইসরাইল যে ইহুদিদের রাষ্ট্র, সেই ধারণা বিপর্যস্ত হবে। সবার উপর ইসরাইলের দাবি হলো, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও তাকে সম্পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা কখনওই দেওয়া যাবে না। তার কোনো নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকতে পারবে না। প্রতিরক্ষার দায়িত্ব থাকবে ইসরাইলের হাতে। বলা বাহুল্য, এমন দাবি ফিলিস্তিন নেতৃত্বের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তথাকথিত ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ তাই অধরাই থেকে গেছে।

১৯৮৭ সালের ইন্তিফাদা বা প্রতিরোধ আন্দোলনের কৌশল ছিল প্রধানত ব্যাপক গণজমায়েতের পাশাপাশি ইসরাইলের পুলিশ-মিলিটারির সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ। তাতে পিএলও ছিল প্রধান সাংগঠনিক শক্তি। ১৯৯৩ সালের শান্তিচুক্তির পর পিএলও সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে ইসরাইলের নজরদারি মেনে নিয়েই ফিলিস্তিন প্রশাসনে মন দিল। আমেরিকা আর ইউরোপের অর্থসাহায্যে এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনবাসীর খাদ্য, স্বাস্থ্য আর শিক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা হলো। 

দুনিয়ার অন্য অনেক মুক্তিযোদ্ধা নেতৃত্বের মতো পিএলও নেতারাও ধীরে ধীরে দুর্নীতিক্লিষ্ট উদ্যমহীনতার পাঁকে ডুবে যেতে লাগলেন। কূটনৈতিক দরকষাকষির মাধ্যমে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা যত ক্ষীণ হয়ে এলো, ফিলিস্তিনের মানুষের সহ্যের বাঁধ ততো ভাঙতে লাগল। ২০০০ সালে ঘটল ব্যাপক প্রতিরোধ-দ্বিতীয় ইন্তিফাদা। এবারে আর পিএলও-র কোনো নিয়ন্ত্রণ রইল না। উদ্যোগ চলে গেল ইসলামিপন্থী সংগঠনের হাতে। ফিলিস্তিনের যুব সম্প্রদায়ের কাছে নিয়মতান্ত্রিক বামপন্থার আর কোনো আকর্ষণ রইল না। শুরু হলো আত্মবলির মিছিল-একের পর এক সুইসাইড বম্বিং। এক দিকে মারা গেল বহু সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে, যুবক শহীদদের স্মৃতিসৌধে কবরস্থান ভরে গেল।

ইতিমধ্যে ইসরাইল আর সব শ্বেতাঙ্গ উপনিবেশের মতোই শিল্প-বাণিজ্যে স্ফীত হয়ে প্রথম দুনিয়ার অংশীদার বনে গেল। বিশেষ করে অস্ত্রশস্ত্রের জোগানদার হিসাবে তার বিরাট রমরমা। পারমাণবিক শক্তির ব্যাপারেও সে কম যায় না। এ নিয়ে পশ্চিমের নেতারা কিন্তু টুঁ শব্দটি করেন না। প্রশ্ন করলে তাদের বাঁধা উত্তর, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। 

ও-দিকে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি যতো বাড়তে লাগল, ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ ততো কঠোর হলো। ফিলিস্তিনের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রতিটি অঙ্গ-তাদের চলাফেরা, কাজে যাওয়া, খাদ্য সরবরাহ, বিনোদন-সব বাঁধা পড়ল ইসরাইলি সেনাশাসকদের নিয়মের শিকলে। পিএলও কর্তৃপক্ষ অকেজো, তার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। আর গাজার প্রশাসনে ঝক্কি বড় বেশি বলে ইসরাইল ২০০৫ সালে তার দায়িত্ব হামাসের হাতে তুলে দেয়। হয়তো আশা ছিল, তা হলে পিএলও-র মতো জঙ্গি হামাসও পোষ মানবে। তা না হলেও, অন্তত পিএলও-হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ঐক্য ব্যাহত হবে। হামাস তাদের ইসলামি স্লোগান ছাড়ল না। কিন্তু বাস্তবে তাদের প্রশাসনের বিশেষ কিছু করার ছিল না। ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে গাজার মানুষ এক বিশাল কারাগারে বাস করতে লাগল।

এক দিকে শিল্প-বাণিজ্য-প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব, অন্য দিকে ফিলিস্তিনের মানুষের হতোদ্যম রাজনীতি, দুইয়ে মিলে ইসরাইলের নেতারা ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠলেন। ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ বিসর্জন দিয়ে তারা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করলেন, এই অঞ্চলে একটিই রাষ্ট্র থাকবে, সেটা ইসরাইল। ইহুদিরা ফিলিস্তিনের সর্বত্র বসতি করে ছড়িয়ে পড়বে। আরবরা সেখানে থাকবে বশংবদ শ্রমজীবী হিসাবে। তাদের কোনো রাজনৈতিক অস্তিত্ব থাকবে না। আরবরা মনুষ্য-পদবাচ্য নয়-ঘৃণ্য, অসভ্য, বর্বর তারা। ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, এক কালে ইউরোপে ইহুদিদের যে জাতিবৈষম্যের অপমান সইতে হতো, আজ ইসরাইলের ইহুদিরা সেই একই ঘৃণাভাষণ ছুড়ে দেয় আরবদের দিকে।

সম্প্রতি আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে বিভিন্ন আরব দেশের ‘স্বাভাবিক’ সম্পর্ক স্থাপন শুরু হয়েছিল। ইমারতি সঙ্ঘ ইউএই-র সঙ্গে ইসরাইলের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০২০-তে। শোনা যাচ্ছিল, সৌদি আরবের সঙ্গেও নাকি চুক্তি হতে চলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যবহারিক স্বার্থের হিসাবনিকাশে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতির আবেগ ক্ষীণ হতে হতে এক সময় মিলিয়ে গেল। ইতিহাসের জঞ্জালের মতো ফিলিস্তিনকে যেন ঝাঁট দিয়ে ফেলে দেওয়া হলো আঁস্তাকুড়ে।

এই অবস্থায় ঘটেছে গত ৭ অক্টোবরের বিদ্রোহ। শিল্পী-সাহিত্যিকেরা যা-ই বলুন না কেন, বিদ্রোহ কখনও দৃষ্টিনন্দন হয় না। বাস্তিল কারাগার ভাঙা দিয়ে যার শুরু, সেই ফরাসি বিপ্লবের রক্তাক্ত কাহিনি ইতিহাসের বইতে লেখা আছে। কিন্তু আজ যখন ঘটা করে বাস্তিল দিবস পালিত হয়, তখন সেই বীভৎসতার ছবি কারও মনে জেগে ওঠে না। বাঙালির ইতিহাসেও তেমন ঘটনা আছে। ক্ষুদিরাম বসু আর প্রফুল্ল চাকি মুজফ্‌ফরপুর গিয়ে কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের গাড়িতে বোমা ছুড়েছিলেন। তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন দুই নিরীহ ইংরেজ মহিলা। আজ বীর শহিদদের কথা বলতে গিয়ে কেউ সে কথা মনে আনে না। মনে থাকে শুধু এই যে তারা দেশবাসীদের দেখিয়েছিলেন, ইংরেজকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যত বাহুবল অস্ত্রবল তাদের থাকুক না কেন, জনতা রুখে দাঁড়ালে তারা পরাস্ত হতে বাধ্য।

আজ টেলিভিশনের খবরে সারা পৃথিবী দেখেছে অবর্ণনীয় নৃশংসতার দৃশ্য-বন্দুকধারী জঙ্গিরা বৃদ্ধ-মহিলা-শিশুদের নির্মম ভাবে হত্যা করছে। আরব দুনিয়ার মানুষ আরও দেখেছে-ইসরাইলের বজ্রমুষ্টিও আলগা করা যায়, তার নিশ্ছিদ্র প্রতিরক্ষার বর্ম ভেদ করা যায়, সে অপরাজেয় নয়। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। 

শোনা যাচ্ছে, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে গণবিদ্রোহ শুরু হতে চলেছে। লেবাননে দুই লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর বাস। সেখানকার হেজবুল্লাহ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত জঙ্গি সংগঠন, হামাসের তুলনায় অনেক জবরদস্ত। তারাও চুপ করে বসে থাকবে না। আমি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নই। গত কয়েক দিনের ঘটনার পর পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেবে কি না, আমি জানি না। কিন্তু আমাদের যৌবনে যেমন জানতাম, আজও তেমনই জানি, লাঞ্ছিত নির্যাতিত জাতির রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা দাবিয়ে রাখা যায় না।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়: ভারতীয় সাংবাদিক


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com