বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫ ২২ কার্তিক ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ৬ নভেম্বর ২০২৫
 
বিদেশ
মামদানির জয় কি ট্রাম্পের মসনদ কাঁপিয়ে দেবে





পালাবদল ডেস্ক
Thursday, 6 November, 2025
8:35 AM
 @palabadalnet

জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

নভেম্বর ৪, ২০২৫। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শুরু হলো ‘জোহরান যুগ’। খোদ মার্কিন মুলুকে মহাশক্তিধর রাষ্ট্রপতির আর্জি উপেক্ষিত হলো আমজনতার কাছে। রাষ্ট্রপতির আর্জি যখন হুমকিতে পরিণত হলো তাও পাত্তা পেল না ভোটারদের কাছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য নিউইয়র্কারের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়,‘দ্য মামদানি এরা বিগিনস’। এতে জোহরান মামদানির স্বপ্ন জয়ের বীরত্বগাঁথা তুলে ধরা হয়েছে।

একই দিনে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন শিরোনামে বলেছে, ‘মামদানি মুবারক’। এতে বলা হয়, নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির বিজয়কে যেন নিজেদেরই বিজয় হিসেবে উদযাপন করছেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূতরা।

এই দুই সংবাদ শিরোনাম কি ইঙ্গিত দিচ্ছে মার্কিন রাজনীতির ভূত-ভবিষ্যৎ?

এ ছাড়াও, দেশটির অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, তরুণ মার্কিনিদের অনেকে যারা মাত্র এক বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পে ভরসা খুঁজেছিলেন, তারা এখন ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করেন, রিপাবলিকান পার্টির নেতারা কেবল নিজেদেরই আখের গোছাতে ব্যস্ত। জনগণকে দেওয়ার মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি তাদের নেই।

তারা আরও বুঝতে পেরেছেন, ধর্ম-বর্ণবিদ্বেষ মানুষের পেটে খাবার জোগায় না। দেয় না মাথা গোঁজার স্থান। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাষ্ট্র তাদের উদ্ধারে হাত বাড়িয়ে দেয় না। তারা এতদিন মনে করতেন অর্থের বিনিময়েই সবকিছু পেতে হয়। রাষ্ট্র এখানে যেন ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’।

এসব ভাবনা এখন পুরনো। সেই পুরনো ভাবনা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার দিন এসেছে। নতুন করে স্বপ্ন দেখার সময় এখন হাতছানি দিচ্ছে। তাদের অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জোর করে বের দেওয়ার চেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে অভিবাসীদের জীবনকে নরকে পরিণত করা, বছর বছর করের পরিমাণ বাড়ানো, বাড়ি ভাড়া স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া, ধনীদের আকৃষ্ট করতে রাজনীতিবিদদের প্রাণান্ত চেষ্টা ও গরিব-গৃহহীনদের শুধু ভোটের বাক্সে ব্যবহার করার দিনে যেন শেষ।

জোহরান মামদানি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প নিউইয়র্ক মহানগরীর সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। এরপর, আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন রাখা হয়, “মামদানির বিজয়: ট্রাম্প কি আইনগতভাবে নিউইয়র্ক নগরীর সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে দিতে পারেন? অথবা, সমৃদ্ধ নিউইয়র্ক কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ওপর কতটা নির্ভরশীল?“

আসলে নিউইয়র্ক নিয়ে যেকোনো উদ্যোগেই ট্রাম্পকে হতে হবে আরও হুঁশিয়ার। এই নগরীর জীবনযাত্রা সামান্যতম বাধাগ্রস্ত হলে এর প্রভাব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে পুরো দেশটির অর্থব্যবস্থায়। তা দিন শেষে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ধস নামার ঝুঁকি তৈরি করবে।

ট্রাম্পের হুমকিতে যেমন জোহরান মামদানি ভয় পাননি, তেমনি ভোটাররাও ভড়কে যাননি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে জোহরানের বাক্সে। এ থেকে বোঝা যায়, অধিকাংশ ভোটার মহাশক্তিধর রাষ্ট্রপতির হুমকিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোট দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অপছন্দের প্রার্থীকেই।

জোহরান মামদানির বিজয়ের পর বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী বছর ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। সে দিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভার ৪৩৫ আসনের সবগুলোয় ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৫টির নির্বাচন হবে।

এই মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সব সময় মহাক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতির জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হয়। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় ট্রাম্প নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র নির্বাচনে ভোটারদের “কথা“ শোনাতে ব্যর্থ হয়েছেন, তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, রিপাবলিকানরা সার্বিক জনমতকে নিজেদের দিকে নেওয়ার মতো কোনো বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা দিতে পারছেন না। তাদের মূল হাতিয়ার, ধর্মবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ ও অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য। কিন্তু, এসবের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে।

বর্তমানে রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে তা হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা প্রতিনিয়ত স্পষ্ট হচ্ছে। কংগ্রেসের কোনো একটি কক্ষ রিপাবলিকানদের হাত ছাড়া হয়ে গেলে পস্তাবে হবে ট্রাম্পকেই। কেননা, হুমকি-ধামকি দিয়ে ভোটার আকৃষ্ট করার দিন আর নেই, এমন বার্তাই দিয়েছেন নিউইয়র্ক নগরীর ভোটাররা।

জোহরান মামদানির বিজয় মার্কিন রাজনীতিতে আরেকটি নতুন বার্তা দিয়েছে। তা হলো, ইসরায়েলি সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শুধু মনোনয়ন নয়, বিজয়ী হওয়াও সম্ভব। ধনীদের কর বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুঁজিবাদের রাজধানী নিউইয়র্কেও বিজয়ের আলপনা এঁকে দেওয়া সম্ভব।

নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসির দূরত্ব ৩৬৪ কিলোমিটার। কিন্তু, নিউইয়র্ক বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় এই নগরীর ভালোমন্দ হোয়াইট হাউসকে আমলে নিতে হয়। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার আগেই হোয়াইট হাউসে প্রভাব ফেলেন। তাকে নিয়ে বারংবার কথা বলতে হয় মহাব্যস্ত রাষ্ট্রপতিকে।

তাই, হয়তো বিজয়ের রাতে জোহরান মামদানি ভক্তদের অনুরোধ করেন, ‘ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে দিতে’, যেন তা হোয়াইট হাউসের পুরু দেওয়াল ভেদ করে মহাক্ষমতাধর ট্রাম্পের কান পর্যন্ত পৌঁছায়। সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, জোহরান মামদানির বিজয়ের মাধ্যমে যদি ট্রাম্পের মসনদ কেঁপে ওঠে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিজয়ের রাতে জোহরান মামদানি ভক্তদের অনুরোধ করেন, ‘ভলিউমটা একটু বাড়িয়ে দিতে’, যেন তা হোয়াইট হাউসের পুরু দেওয়াল ভেদ করে মহাক্ষমতাধর ট্রাম্পের কান পর্যন্ত পৌঁছায়।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com