বৃহস্পতিবার ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ৭ কার্তিক ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ২৩ অক্টোবর ২০২৫
 
বিদেশ
ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রক্রিয়ায় একমাত্র বাধা নেতানিয়াহু: হারেৎজ





পালাবদল ডেস্ক
Wednesday, 22 October, 2025
10:14 PM
 @palabadalnet

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হাত থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা যেতে পারে। কিন্তু, নেতানিয়াহুর প্রাচীন ও ধর্মবিশ্বাসভিত্তিক চিন্তাভাবনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছে শতবর্ষী ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ।

গতকাল মঙ্গলবার দৈনিকটির এক মতামত প্রতিবেদনে এমনটি তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলে আনন্দ হলেও কিংবা যুদ্ধ শেষ হচ্ছে এমন ভাব সবার মনে এলেও প্রকৃতপক্ষে এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে বা ইসরায়েল কোনদিকে যাচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ।

সবাই জানেন যে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় অনেক ধোঁয়াশা আছে। এ ছাড়াও, এটি ভঙ্গুর। এতে ট্রাম্প ও তার আঞ্চলিক মিত্রদের স্বার্থ আছে। মূল প্রশ্ন হচ্ছে-এই শান্তি প্রক্রিয়া কি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবে? এর প্রধান বাধা আগেও যেমন ছিল, এখনো তা রয়ে গেছে। সেই বাধাটির নাম-নেতানিয়াহু।

এই ইসরায়েলি নেতার কর্মকাণ্ডের ওপর ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার সাফল্য নির্ভর করছে বলেও লেখায় উল্লেখ করা হয়। কেননা, এই পরিকল্পনা নস্যাৎ করার ক্ষমতা শুধু নেতানিয়াহুই রাখেন। তিনি যে এই পরিকল্পনার ক্ষতি করতে পারেন, তা ট্রাম্প বিলকুল বোঝেন।

এ কথা আগেও বলা হয়েছিল যে ট্রাম্পের মূল সমস্যা নেতানিয়াহু। তাদের দুইজনের স্বার্থ এক নয়। নেতানিয়াহু তার স্বার্থের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বার্থ মেলানোর চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে কখনো নেতানিয়াহু সেই সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণাও করেন। এসব কথা মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ অন্যান্য প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।

ট্রাম্প এই শান্তি প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রেখেছেন তার জামাতা জারেড কুশনারকে। এ ঘটনাও সেই পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি। আরব ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকদের সঙ্গে কুশনারের ভালো যোগাযোগ। উপসাগরীয় অঞ্চলে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। তিনি ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে কাজ করছেন। আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করে কুশনার স্বার্থগত মতপার্থক্য দূর করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু, কুশনারেরও প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্প প্রবল চাপ সৃষ্টি করায় কুশনারের জন্য হয়তো কাজ করতে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। তিনিই উইটকফকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্পের মাধ্যমে নেতানিয়াহুকে চাপ দেন কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে টেলিফোনে 'দুঃখ প্রকাশ' করার জন্য। ছবিতে দেখা যায়, সেসময় নেতানিয়াহুসহ তার প্রতিনিধিদলের সবার চেহারা ভীষণ মলিন ছিল।

নেতানিয়াহুর প্রতি ইসরায়েলিদের ঘৃণা কুশনারের অজানা নয়। তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে তার উপস্থিতিতে নেতানিয়াহুর নাম উচ্চারণের সময় সমবেত জনতার মুখে 'ছিঃ ছিঃ' রব উঠেছিল। তা কুশনারকেও শুনতে হয়।

ট্রাম্প জানেন যে শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন আরব উপদ্বীপে একদিকে তার স্বার্থ রক্ষা করবে, অন্যদিকে তার প্রভাব বাড়াবে। যদি তিনি সফল হন, তাহলে ইউরোপীয় মিত্রদের সহায়তায় আগামী নোবেল শান্তি পুরষ্কার তার ঝুলিতে পড়তে পারে।

ইসরায়েল জানে-এই চুক্তি ইসরায়েলি সমাজ ও অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। একটি উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম করেছে। 

ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞা আসছে। শিক্ষিত তরুণরা ইসরায়েল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বিদেশি বিনিয়োগে ধস নেমেছে।

নেতানিয়াহুর রাজনীতি চলতে থাকলে বিপদ থেকে যাবে। সাদা চোখে পরিস্থিতি বদলানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নেতানিয়াহু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। ট্রাম্পের সফরের সময় নেতানিয়াহু নেসেটে যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেখানেও তিনি প্রাচীন ও ধর্মবিশ্বাসভিত্তিক চিন্তাভাবনা তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েল চারপাশে শত্রু রাষ্ট্র দ্বারা পরিবেষ্টিত। তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। যে যুদ্ধের শেষ নেই, তিনি সেই যুদ্ধের দিকে সবাইকে ঠেলে দেওয়ার কথা বললেন।

নেতানিয়াহু ধর্মগ্রন্থ ব্যবহার করে ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী শক্তি গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। তিনি ইসরায়েলের বিচারব্যবস্থা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই তার অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট ও অ্যাটর্নি জেনারেল দাওয়াত পাননি।

যা হোক, আগামী বছর ইসরায়েলে জাতীয় নির্বাচনের কথা থাকলেও 'জরুরি অবস্থা'র অজুহাতে নেতানিয়াহু হয়তো তা পেছানোর চেষ্টা করবেন। তিনি আবারও ইরানে হামলা শুরু করতে পারেন।

এ ছাড়াও, শান্তি প্রচেষ্টায় নেতানিয়াহু যে কতটা বাধা সৃষ্টি করেছিলেন, নেসেট বক্তৃতায় ট্রাম্প তা উল্লেখ করেছেন। এমন হতে পারে যে নেতানিয়াহু বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার বিরোধীদের ভেতর থেকে ট্রাম্প বিকল্প খুঁজে নেবেন।

তবে, ইসরায়েলের উদারপন্থি জনতাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। এখন আর জিম্মিদের জন্য গণসমাবেশ করতে হবে না। তাই নেতানিয়াহুবিরোধী আন্দোলনকে নতুনভাবে সাজাতে হবে। নেতানিয়াহুও চুপচাপ বসে থাকবেন না। 

তিনি জাতীয় সম্পদ লুট করে তার সামরিক আগ্রাসনসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন হয়তো একটু দম নেওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু, সাধু সাবধান। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com