বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৩ চৈত্র ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
 
জাতীয়
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলায় কাসেমের মৃত্যুতে উত্তাল সারাদেশ





নিজস্ব প্রতিবেদক
Thursday, 13 February, 2025
2:14 AM
 @palabadalnet

জানাজা শেষে কাশেমের মরদেহের কফিন নিয়ে মিছিল বের করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

জানাজা শেষে কাশেমের মরদেহের কফিন নিয়ে মিছিল বের করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের গাজীপুরের বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলায় আহত কাশেম খানের মৃত্যুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। কাশেমকে হত্যার প্রতিবাদে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাতে ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনী চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুরসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভ মিছিল করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠে এবং সাড়ে ১১টায় গাছা থানার বোর্ডবাজারের আল-হেরা সিএনজি পাম্প স্টেশন মাঠে পৃথক জানাজা শেষে কাশেম খানকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আবুল কাশেমের কফিন নিয়ে বুধবার রাতে মিছিল হয়েছে। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছিল। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা।

বুধবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাশেমের (২০) মৃত্যু হয়।

বুধবার রাত নয়টার কিছু আগে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে নিহত আবুল কাশেমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়। এরপর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো মরদেহটি রাখা হয়। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়।

জানাজা শুরুর আগে কাতারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল।

আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “গাজীপুরে আমাদের ভাইকে হত্যার পেছনে যারা সক্রিয়ভাবে থেকেছে, হুমকি দিয়েছে ও পরিকল্পনা করেছে, তারা সবাই ফ্যাসিবাদী লীগ। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার বিন্দু পরিমাণ অধিকার রাখে না।”

আইনিভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির এই সদস্যসচিব। পাশাপাশি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ারও দাবি জানান। তিনি বলেন, “শহীদ ভাইয়ের লাশের শপথ নিয়ে বলছি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।”

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর জুলাই বিপ্লবীদের আওয়ামী লীগের হাতে শহীদ হতে হচ্ছে। এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সম্মিলিত ব্যর্থতা। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জন্য আপনারা আর কত সময় নেবেন? আপনারা দ্রুততম সময়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।”

এ সময় হাসনাত বলেন,“আবুল কাশেমের লাশ সামনে রেখে শপথ নিচ্ছি, আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ করে ছাড়ব। এই দেশে হয় আওয়ামী লীগ থাকবে, নয়তো আমরা থাকব।” সাংস্কৃতিকসহ নানা তৎপরতার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে বৈধতা উৎপাদন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আরিফ সোহেল বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ছয় মাস পরও বিপ্লবীদের শহীদ হতে হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, অন্তর্বর্তী সরকার তাহলে কী করছে? কেন ফ্যাসিবাদীদের বিচার হচ্ছে না?’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, যারা তাদের পক্ষ নিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করছে, হামলা করছে, প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সরকার এই কাজে ব্যর্থ হলে বিপ্লব সম্পূর্ণ করার কাজ বিপ্লবীরাই নিজেদের হাতে তুলে নেবে।

এই নেতাদের বক্তব্যের পর আবুল কাশেমের জানাজা হয়। শিক্ষার্থীসহ কয়েক শ মানুষ এতে অংশ নেন। জানাজা শেষে কাশেমের মরদেহের কফিন নিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’,‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’-এমন বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিলটি শাহবাগ মোড়ের আগে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছে, তাদেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশীদ, আহনাফ সাঈদ খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তারাও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। রাত সোয়া ১০টায় সমাবেশ শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ থেকে চলে যান।

এদিকে, গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সহপাঠীদের রক্তের বিনিময়ে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। সেই রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি এবং স্বৈরাচার দূর করতে সফল হয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেখছি না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো ব্যবস্থা দেখছি না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আওয়াজ তুলতে চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার ও সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব মহসিন জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় মো. কাসেমসহ গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার সাইন বোর্ড কামারজুরি এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে শুভ শাহরিয়া (১৬), শরীফপুর এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইয়াকুব (২৪), টঙ্গী পূর্ব থানার মধুমিতা রোড এলাকার গণেশ ঘোষের ছেলে সৌরভ (২২) এবং সদর থানার জোড়পুকুর এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে হাসান (২২) ও অপর দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মো. কাশেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টায় মারা যান। মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাত রয়েছে তার।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, “৫ আগস্টের পর আজকে এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে, আমরা এখনো পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করিনি। আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তচোষা ইতিহাস । ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা ও গত ১৭ বছর শত শত লাশ হত্যা করেছে এবং গুম করেছে। আমরা মনে করেছিলাম ৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনার রক্তচোষা বন্ধ হয়ে যাবে। লাশের রাজনীতি করা আওয়ামী লীগের স্বভাব। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি ।”

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে কাশেমের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লিখেছেন, গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ওই পোস্টে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে লিখেছেন, ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’

উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে কে বা কারা লুটপাট করছে এমন খবর দেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী লুটতরাজ ঠেকানোর জন্য মোজাম্মেল হকের বাড়িতে যান। এসময় তাদের আটক করে মাইক দিয়ে ডাকাত পড়েছে এমন খবর ছড়ানো হয়। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আটক করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর নির্মম হামলা চালায়। রামদাসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ২০ জনকে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় কাশেম খান সিয়ামসহ গুরুতর আহত পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় ।

নিহত কাসেমের বাড়ি গাজীপুর জেলার গাছা থানার ভোটবাজার দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত হাজী জামালের ছেলে।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com