অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: কারাগারে আটক বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে। যেসব নেতা এক সময় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন, তাদেরকেও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। একদম নির্জন অন্ধকার প্রকোষ্ঠ। যেখানে ‘দমবন্ধ’ পরিবেশ। দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভেতরে আটক রাখা হয়।”
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর আত্মগোপনে যাওয়া বিএনপি নেতা বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ আনলেন।
রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটা সরাসরি সরকারি নিপীড়ন। তিনি এমনিতেই অসুস্থ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এই ধরনের রোগাক্রান্ত একজন অসুস্থ নেতাকে যে টানাহেঁচড়া করছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”
অবরোধের মধ্যে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে আক্রমণ চালাচ্ছে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “গ্রেফতার করা হয়েছে নির্বিচারে পাইকারিভাবে, ব্লক রেইড চলছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। রিমান্ড আর গ্রেফতার, এ যেন আওয়ামী দুঃশাসনের অন্যতম পণ্য।”
সরকার দেশকে ‘বিএনপি শূন্য’ ও ‘গণতন্ত্র শূন্য’ করার জন্য যত ধরনের পদ্ধতি দরকার, সেটি সরকার করে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, “বিএনপিসহ বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারণ জনগণ জানতে না পারে।”
বিএনপি নেতার দাবি, বিএনপির হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৩ হাজার ৪৩৬ জনকে আহত করা হয়েছে, ২ হাজার ৫৬৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন, মামলা হয়েছে ৫৫টির বেশি। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারের সংখ্যা ৪ হাজার ২৮৩ জন বলেও জানান তিনি। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮০টির বেশি।
‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর নিষ্ঠুরতা বেড়েছে’
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরে পুলিশ বাহিনীর ‘নির্যাতন’ আরো বেড়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর পুলিশ ‘রক্তের যে হোলিখেলা’ খেলেছে সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে অনর্গল ‘মিথ্যা’ কথা বলেছেন। অথচ দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়িক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন সেটিকে খণ্ডাবেন কী করে? জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে যে, মুখোশ পরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, রাইটস গ্রুপ… জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন তারা পর্যন্ত জানে মুখোশ পরা হেলমেটধারীরা সবাই সরকারের লোক।”
‘এটাকে আপনি অস্বীকার করবেন কী করে?’-প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, “আপনি মনগড়া, বানোয়াট একের পর এক অভিযোগ দিয়ে কথা বলছেন। এই সমস্ত কথা জনগণ বিশ্বাস করে না, কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেও পারে না।”
‘পোশাক শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য’
সরকার ‘সন্ত্রাসী কায়দায়’ পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলন দমন করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, “সরকার শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে। কি বর্বরোচিতভাবে আক্রমণ চালিয়েছে শ্রমিকদের ওপরে। গতকাল একজন যুবলীগ নেতা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শ্রমিকদের আন্দোলনে। সেখানেও সন্ত্রাসী দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমানো হচ্ছে।”
পোশাক শ্রমিকদের দাবিতে বিএনপির সমর্থন আছে জানিয়ে রিজভী বলেন, “এমন তো বেশি টাকা নয়, ওরা এখন যে বেতন পায় সেখান আপনি দেখেন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে খাদ্য পণ্যের দাম। খেটে খাওয়া মানুষ কী খাবে? ওরা যে মজুরির জন্য সংগ্রাম করেছেন এটা কোনো অযৌক্তিক সংগ্রাম নয়, সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম।”