গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে রাত আটটা থেকে শুরু হয়েছে কারফিউ। চলবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
সন্ধ্যার পরই অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে গোপালগঞ্জ শহর। ঘরে ফেরা কয়েকজন মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় দেখা গেলেও তাদের চোখেমুখেও ছিল আতঙ্ক।
শহরজুড়ে টহল দিচ্ছে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতির কথাও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বাড়তি নজরদারিও করা হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি’র পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল গোপালগঞ্জে।
সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার পরই শুরু হয় সংঘর্ষ। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহর। নিহত হয় চার জন। এরপরই কারফিউ জারি করে জেলা প্রশাসন।
গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করার কথা জানিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “জীবন-মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি না হলে সাধারণ জনগণ কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সন্ত্রা*সীদের * ভেঙে দেওয়া হবে।”
উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে আরও বলেছেন, “পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সবকিছু মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানগণ।”
পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে না: আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ধৈর্য ধরে তারা গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন।
বাহারুল আলম বলেছেন, “উচ্ছৃঙ্খলতা যা হয়েছে, সেটা যতটুকু সম্ভব আমরা ধৈর্যের সাথে প্রশমন করার চেষ্টা করছি, আমরা এখন রিইনফোর্সড (আরো পুলিশ সদস্য পাঠানো) করছি, পুরো জিনিসটা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। আমরা লিথ্যাল (প্রাণঘাতী অস্ত্র) কোনো কিছু ব্যবহার করছি না, তাই আমাদের একটু সময় লাগছে।”
এনসিপির সমাবেশ ঘিরে দুপুর থেকে গোপালগঞ্জে উত্তেজনা চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে যদিও সেনা-পুলিশ পাহারায় এনসিপির নেতাকর্মীদের গোপালগঞ্জ শহর থেকে বের করে আনা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকারের বিবৃতি
এনসিপি’র কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বুধবার বিকেলে অন্তর্বতী সরকারের তরফ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে তরুণ নাগরিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে বাধা দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। নিষ্ঠুর আক্রমণের মাধ্যমে ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি, পুলিশ ও গণমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
“নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ অ্যাকটিভিস্টদের এই জঘন্য কর্মকাণ্ড বিনা বিচারে ছেড়ে দেওয়া হবে না। দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করা হবে এবং বিচার নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ওপর এরকম সহিংসতা করার জায়গা নেই,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশের প্রশংসা করা হয়েছে বিবৃতিতে। এছাড়া হুমকির পরও সমাবেশ চালিয়ে যাওয়ায় কর্মসূচির আয়োজকদের প্রশংসা করা হয়।