সরকার ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম: ঈদুল আজহার কোরবানির চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রামের মৌসুমি ও স্থায়ী চামড়া ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দরের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে কাঁচা চামড়া। আবার অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন। কেউ কেউ আবার ফেলেও দিয়েছেন।
সরকার ঢাকায় লবণ দেওয়া গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করলেও চট্টগ্রামে বাস্তব পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ব্যবসায়ীদের দাবি, অধিকাংশ লেনদেনই হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম দামে।
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর হাউজিং সোসাইটির কে-ব্লকের বাসিন্দা আবদুস সবুর বলেন, এই বছরও কেউ চামড়া নিতে আসেনি। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ক্রেতা না পেয়ে এক দাতব্য সংস্থায় দিয়ে দিয়েছি।
বন্দর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এম এ সালাম বলেন, এলাকায় কোনো ক্রেতা আসেনি। কেবল দুই-একজন মাদ্রাসার প্রতিনিধি এসে চামড়া চেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমরা ইসলামী সমাজ কল্যাণ সংস্থাকে দিয়ে দিই।
দক্ষিণ খুলশি আবাসিক এলাকার খুরশিদ আলমও জানান, কোনো ক্রেতা না আসায় চামড়া স্থানীয় একটি এতিমখানায় দান করেছেন।
তবে কেউ কেউ আবার সরকার নির্ধারিত দরের অর্ধেকেরও কম দামে চামড়া বিক্রি করেছেন।
নগরের অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা সারওয়ার জাহান জানান, সরকারি দরে ২০ বর্গফুটের একটি চামড়ার মূল্য প্রায় ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু আমি বিক্রি করেছি মাত্র ৪৩০ টাকায়।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, অধিকাংশ ট্যানারি ঢাকায় হওয়ায় পরিবহন ব্যয় যোগ হয়ে চট্টগ্রামে ন্যায্য দাম পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
মৌসুমি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান জানান, তিনি ১৭০টি গরুর চামড়া কিনেছিলেন গড়ে ৩৫০ টাকা করে। পরে বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ২৫০ টাকায়।
“প্রতি চামড়ায় ১০০ টাকা করে লোকসান হয়েছে। আজ যদি আরও কম দামেও বিক্রি করতাম, কেউ নিত না। শেষ পর্যন্ত কিছু চামড়া ফেলে দিতে হয়েছে,” বলেন তিনি।
চট্টগ্রামে এবার তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা গত বছরের সাড়ে তিন লাখের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। আগের বছরগুলোর তুলনাতেও ক্রমান্বয়ে এই সংখ্যা কমছে-২০২৩ সালে ৩ লাখ ৯ হাজার, ২০২২ সালে চার লাখ ১ হাজার, ২০২১ সালে ৪ লাখ ৭০ হাজার, ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ লাখ এবং ২০১৯ সালে ৫ লাখ ৭৫ হাজার।
চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০০টি কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে এবং এই খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ কাজ করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এক সময়ের ২২টি ট্যানারির মধ্যে বর্তমানে কেবল একটি চালু রয়েছে। সেটির নাম রিফ লেদার ট্যানারি।