বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৩ চৈত্র ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
 
বিদেশ
কেন গ্রেফতার ফিলিপাইন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে?





ডয়চে ভেলে
Wednesday, 12 March, 2025
3:20 PM
 @palabadalnet

রদ্রিগো দুতার্তে। ছবি: এপি

রদ্রিগো দুতার্তে। ছবি: এপি

ফিলিপাইন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদরিগো দুতার্তেকে গ্রেফতার করলো সেই দেশের পুলিশ। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর নামে তার শাসনকালের হিংস্রতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসি। মঙ্গলবার হংকং থেকে দেশে ফিরলে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় ৭৯ বছরের এই প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতাকে।  

গ্রেফতারের পরেও অবশ্য দুতার্তে কোনো অনুশোচনা ব্যক্ত করেননি। তার ২০১৬ থেকে ২০২২ এর শাসনকালে ড্রাগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে হাজার হাজার মানুষ খুন হন। সরকারি হিসেবে তা ছয় হাজারের একটু বেশি হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে সংখ্যাটা ১৬ থেকে ২২ হাজার। দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি দাভাওয়ের মেয়র ছিলেন।

গ্রেফতার হওয়ার পরে কীসের ভিত্তিতে তিনি গ্রেফতার হলেন তা জানতে চান দুতার্তে।

এই গ্রেফতারকে দুতার্তের সাবেক প্রেসিডেন্সিয়াল মুখপাত্র সালভাদোর প্যানেলো 'আইন বিরুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান ফিলিপাইন্স ২০১৯-এ আইসিসি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। 

আইসিসির পক্ষ থেকে অবশ্য এর আগেই জানানো হয়েছিল যে দুতার্তের বিরুদ্ধে ২০১৯-এর আগে আসা অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা বিচারের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। 

সমাজকর্মীরা এই গ্রেফতারকে 'ঐতিহাসিক' বলে আখ্যা দিয়েছেন। মানবাধিকার যৌথ মঞ্চ ফিলিপাইন্সের ইন্টারন্যাশানাল কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস (আইসিএইচআরপি) জানিয়েছে যে সব পরিবার দুতার্তের মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধ্বংস হয়ে গেছে তাদের জন্যও এই গ্রেফতার খুবই উল্লেখযোগ্য।

আইসিএইচআরপির চেয়ারম্যান পিটার মার্ফি বলেন, “নৈতিকতার যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। তবে আজ সেই পথ ন্যায়বিচারের পক্ষ নিয়েছে। দুতার্তেকে তার সময়ে ঘটা নৃশংসতার জবাব দিতে হবে। এই গ্রেফতার সেই জবাবদিহির প্রথম পদক্ষেপ।”

হংকং-এ আগামী ১২ মে নির্বাচনের প্রচারের কাজে গেছিলেন দুতার্তে। তিনি দাভাওয়ের মেয়র পদে লড়বেন বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত চিত্রে দেখা গেছে দুতার্তে লাঠি নিয়ে হাঁটছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তিনি সুস্থ আছেন। সরকারি ডাক্তাররা তার দেখাশোনা করছে।

হংকং ছাড়ার আগে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমার অপরাধ কী? আমার শাসনকালে ফিলিপাইন্সের মানুষকে শান্তিপূর্ণ জীবন দিতে আমি সচেষ্ট ছিলাম।”

দুতার্তে ২২ বছর দাভাওয়ের মেয়র পদে ছিলেন। তার সময়কালে তিনি এই অঞ্চলকে দেশের মধ্যে সব থেকে নিরাপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। দুতার্তে নিজেকে বাগ্মী এবং শক্তিশালী রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ২০১৬তে প্রচুর ভোটে জয়ী হন।

এর পরেই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর নামে কর্তৃপক্ষের হাতে প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা যান। অভিযোগ, পুলিশের পাশ্যাপাশি অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতিদেরও এই নিধনযজ্ঞে কাজে লাগানো হয়েছিল। সমাজকর্মীদের দাবি, সংখ্যাটা ছয় হাজারের চেয়ে আরো অনেক বেশি। 

আগে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, এই নিধনকাণ্ডে নিহতদের অধিকাংশই শহরাঞ্চলের গরিব মানুষ। পুলিশ ভয় দেখিয়ে বহু মানুষের থেকে মিথ্যে জবানবন্দি নিয়ে তাদের হত্যা করেছে।

সমালোচকদের মতে, মাদক কাণ্ডে জড়িত বড় ড্রাগ মাফিয়াদের ধরতে না পেরে শহরাঞ্চলের গরিব মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করেছে দুতার্তের প্রশাসন। এই পরবারের বহু মানুষ বলেছেন তাদের বাড়ির সন্তান,স্বামী বা অন্য কেউ কেবলমাত্র ভুল সময় ভুল জায়গায় থাকার কারণে নিহত হয়েছেন।

দুতার্তে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার নীতির উপর প্রশ্ন তুলে কোনো লাভ নেই। আমি ক্ষমা চাইব না। কোনো অজুহাত দেব না। দেশের জন্য আমার যা ঠিক মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।”

তিনি আরো বলেন,“আমি মাদক সেবনকে ঘৃণা করি। এই নিয়ে কারো কোনও সন্দেহ থাকার কথা না।”

আইসিসি ২০১৬তে প্রথম অভিযোগ পায় এবং ২০২১-এ তদন্ত শুরু করে। ২০১১-র নভেম্বর থেকে ২০১৯-এর মার্চ পর্যন্ত পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে তারা।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com