বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৩ চৈত্র ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
 
পরিবেশ
বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ, সবচেয়ে দূষিত নগরের তালিকায় তৃতীয় ঢাকা





ডয়চে ভেলে
Wednesday, 12 March, 2025
3:08 PM
Update: 12.03.2025
3:10:45 PM
 @palabadalnet

বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বাংলাদেশে। ছবি: ডয়চে ভেলে

বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বাংলাদেশে। ছবি: ডয়চে ভেলে

বায়ুদূষণে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ৷ সবচেয়ে দূষিত নগরের তালিকায় তৃতীয় ঢাকা৷ এটা ২০২৪ সালের চিত্র।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক  বায়ুমান পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪'-এ মঙ্গলবার এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই তাৎক্ষণিক আইকিউ এয়ার-এর সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

২০২৩ সালে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল।  আর নগর হিসেবে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। তবে দূষণে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি৷

আইকিউএয়ার বায়ুদূষণের সূচক তৈরি করে দূষণের অন্যতম উপাদান পিএম(পার্টিকুলেট ম্যাটার) ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান হিসাব করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। তার আগের বছর তা ছিল ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম।

বাংলাদেশে বায়ুমান নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেয়ার পলিউশন স্ট্যাডিজ (ক্যাপস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার  বলেন, “তারা যে বায়ুমান নির্ধারণ করেন, সেটা শুধুমাত্র অতিক্ষুদ্র ধুলাবালির (পিএম ২.৫) উপস্থিতি বিবেবচনা করে। বাতাসে আরো অনেক রাসায়নিক উপাদান আছে। তার হিসাব তারা করে না। প্রতি ঘন মিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য, কিন্তু আমাদের বাতাসে আছে ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে ১৫ গুণেরও বেশি।”

বায়ুদূষণে দেশ বিবেচনায় বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। দেশটির বায়ুতে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ৭৩.৭ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশ মায়ুমান রক্ষা করতে পারছে- অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোস, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া এবং আইসল্যান্ড। ১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার  বলেন, “আমাদের বায়ুমান খারাপ হওয়ার কারণ অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, ইটের ভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, মানহীন জ্বালানি, বর্জ্য পোড়ানো। আর এখন ঢাকার বাইরে বায়ুদূষণ বাড়ছে ইটভাটার কারণে। সারাদেশে এখন সাড়ে সাত হাজার ইটভাটা আছে।”

তার কথা, “পার্শ্ববর্তী দেশও আমাদের এখানে বায়ুদূষণ ঘটায়। পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, দিল্লি ওইসব জায়গা থেকে ধুলাবালি আসে। এমনকি শীতে হিমালয় থেকে যে বাতাস আসে, তাতে কাঠমুন্ডু থেকে ধুলাবালি আসে,” বলেন তিনি।

স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "দেশের বাইরে থেকে এখানে বায়ুদূষণ কম হয়। এনভায়র্নমেন্ট পলিউশন এবং প্ল্যানিং কমপ্লায়েন্স-এই দুটি বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। কিন্তু এখানে উন্নয়ন পরিকল্পনায় সেগুলো না মানার কারণে বাতাসের মান চরম খারাপ পর্যায়ে গেছে। শহরে ভবনগুলো কোনো নীতি না মেনেই তৈরি হচ্ছে। এখন আবার যে আইন আছে তা-ও পরিবর্তনের চেষ্টা করছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে আবার সরকারের কেউ কেউ সায়ও দিচ্ছে। আর শহরের বাইরে ইটভাটার কোনো নীতি নাই, যদিও সরকার অভিযানের কথা বলছে।”

“এর বাইরে নাগরিকরাও সচেতন নয়। তারা যদি সচেতন হতেন, তাহলে নির্মাণ সামগ্রী ওপেন রেখে ভবন নির্মাণ করতেন না। সরকারও নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই,” বলেন তিনি।

কমিউনিটি মেডিসিন বিষেশজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “আমাদের এখানে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যারা মারা যায় তাদের চার ভাগের এক ভাগ মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে। বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের নানা রোগে ভোগেন এখানকার মানুষ। এছাড়া হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হন, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।”

তার কথা, "বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন গর্ভবতী মা ও শিশুরা। বন্ধ্যাত্ব এবং পুরুষত্ব হারানোর পিছনেও আছে বায়ুদূষণ।”

ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার  বলেন, “বাযুদূষণ কমাতে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এখানে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সবার দায়িত্ব আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বন্ধ করলে ১৫ ভাগ বায়ুদূষণ কমবে, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করলে ১০ ভাগ কমানো যায়, ইটের ভাটাগুলোকে পরিবেশবান্ধব করলে ২০ ভাগ বায়ুদূষণ কমানো যায়।”

“আইকিউএয়ারের হিসাবের বাইরেও আমাদের এখানকার বাতাসে আরো অনেক ক্ষতিকর উপাদান আছে। তার মধ্যে আছে লেড, মার্কারি , সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, পিএম-১০ প্রভৃতি,” বলেন তিনি।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com