বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫ ১৩ চৈত্র ১৪৩১
বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ২০২৫
 
প্রতিরক্ষা
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান: ইচ্ছে করলেই ওয়াশিংটনে বসেই সব অকেজো করতে পারে আমেরিকা





পালাবদল ডেস্ক
Wednesday, 12 March, 2025
1:53 PM
Update: 12.03.2025
1:56:42 PM
 @palabadalnet

ট্রাম্পের হাতিয়ার কি এ বার ‘কিল সুইচ’? যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানির দাবি কি সতর্কবার্তা ভারতের জন্যও?

বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলির অন্যতম এফ-৩৫ ‘স্টেল্‌থ’ প্রযুক্তিসম্পন্ন। ফলে রাডারের নজরদারি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে হামলা বা নজরদারির কাজ করতে পারে।

আমেরিকায় তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। আমেরিকার বায়ুসেনার বিমান এফ-৩৫, চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন।

বিশ্বের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানগুলির অন্যতম এফ-৩৫ ‘স্টেল্‌থ’ প্রযুক্তিসম্পন্ন। ফলে রাডারের নজরদারি এড়িয়ে শত্রুপক্ষের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে হামলা বা নজরদারির কাজ করতে পারে।

আমেরিকায় তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে যখন এত আলোচনা, এত দোনামনা তখন এফ-৩৫ নিয়ে জার্মানি এমন এক দাবি করেছে, যাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব জুড়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে।

জার্মানির আশঙ্কা, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে এমন একটি ‘কিল সুইচ’ রয়েছে, যা সক্রিয় করলে ওই যুদ্ধবিমানগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, জার্মানি, বৃটেন-সহ ১৩টি ইউরোপীয় দেশ আমেরিকার থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চুক্তি করেছে। কিল সুইচের ধারণা সত্যি হলে ওই দেশগুলি বিপদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। কেউ কেউ আবার মনে করছেন ট্রাম্পের ‘হাতের পুতুল’ হয়ে থাকতে হতে পারে ওই দেশগুলিকে!

কিন্তু কী এই ‘কিল সুইচ’? ‘কিল সুইচ’ হল এমন একটি সুইচ যা দিয়ে এক মুহূর্তে যুদ্ধবিমান নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যাবে। তা সে যুদ্ধবিমানগুলি যে দেশেই থাকুক না কেন। জার্মানির আশঙ্কা, এভাবে এফ-৩৫ বিমানগুলির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার কাছে।

কিন্তু তা নিয়ে কেন আশঙ্কা প্রকাশ করছে জার্মানি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু কোটির একটি চুক্তি করেছে জার্মানি, যার আওতায় ৩৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পেতে চলেছে তারা। আর সে কারণেই জার্মানির আশঙ্কা, যুদ্ধবিমানগুলি তাদের কাছে থাকলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে আমেরিকার হাতেই।

উল্লেখ্য, এফ-৩৫ বিমানে ‘কিল সুইচ’ থাকা নিয়ে বহু দিন ধরেই জল্পনা চলছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা প্রমাণিত হয়নি। জার্মানির ওই দাবিতে, আবার নতুন করে হইচই পড়েছে।

সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য সামরিক সাহায্য বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ট্রাম্প সরকার। তার আগে দু’দেশের মধ্যে খনি চুক্তি স্থগিত হয়। এর পরেই একটি রিপোর্টে উঠে আসে যে, ইউক্রেনের হাতে থাকা মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলি ইউক্রেনে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

এর পরেই উদ্বেগ তৈরি হয় যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইউক্রেনের মতো অন্য দেশেও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারেন ট্রাম্প। যখন তখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাতে থাকা যুদ্ধবিমানগুলি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারেন তিনি।

পরে দেখা যায়, রাডার সিস্টেমের জন্য কাজ করা বন্ধ করেছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলি। তবে নিজেদের ‘কিল সুইচ’ দাবি থেকে পিছু হঠেনি জার্মানি। জার্মানির অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘হেনসোল্টের’ যোগাযোগ বিভাগের প্রধান জোয়াকিম শ্রানজোফার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘এফ-৩৫-এর কিল সুইচ কিন্তু কোনো গুজব নয়।’’

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান কঠোর অবস্থানের কারণে ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই জার্মানির দাবি, ভবিষ্যতে তাদের জব্দ করতে কিল সুইচের ব্যবহার করতে পারে আমেরিকা।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বিভাগ আবার অন্য কথা বলছে। তাদের দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ নিষ্ক্রিয় করতে পারে, এমন দাবি ভুয়া। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে, যুদ্ধবিমানগুলি যে কোনও সময় স্বাধীন ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বেলজিয়ামের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল ফ্রেডেরিক ভ্যানসিনাও গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, এফ-৩৫ কোনো ‘রিমোট-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিমান নয়’।

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান উলফগ্যাং ইশিংগার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনকে ট্রাম্পের সমর্থন না করা প্রতিরক্ষা বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কের জন্য অশুভ ইঙ্গিত। তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি আমাদের আশঙ্কা হয় যে, আমেরিকা এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিয়ে জার্মানির সঙ্গেও ইউক্রেনের মতোই করবে, তা হলে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’’

আমেরিকার যুদ্ধবিমান নিয়ে জার্মানির সেই দাবির মাঝখানেই অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, পুরো বিষয়টি ভারতের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। গত মাসেই বেঙ্গালুরুর ইয়ালেহাঙ্কা  বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫’-এ যুদ্ধকৌশল প্রদর্শন করতে আমেরিকা দু’টি এফ-৩৫ পাঠিয়েছিল। তার পরেই ভারতের বিমানবাহিনী এগুলির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এর পর ট্রাম্প নিজেই প্রস্তাব দেন মোদিকে। আমেরিকায় তৈরি এফ-৩৫ এবং রাশিয়ায় নির্মিত সুখোই এসইউ-৫৭-র মধ্যে কোনো একটি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনা বেছে নিতে পারে বলে গত কয়েক বছর ধরেই জল্পনা রয়েছে। ভারতীয় মিডিয়া রীতিমতো প্রচারে নামে। তারা বলা চেষ্টা করে এই বিমান যাওয়ার দিল্লি এখন চীন ও পাকিস্তানকে দেখে নেবে! 

এখন ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ এ ক্ষেত্রে রুশ বিমান কেনার পক্ষপাতী। তাদের যুক্তি, অতীতে কখনও আমেরিকার তৈরি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান ভারতীয় সেনা ব্যবহার করেনি। অন্য দিকে, মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০-সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান ব্যবহারের অভিজ্ঞতা রয়েছে ভারতীয়  বিমানবাহিনীর ফাইটার পাইলটদের। যদিও উৎকর্ষের বিচারে এফ-৩৫ এগিয়ে বলে পাল্টা মতও রয়েছে।

তবে ‘কিল সুইচের’ দাবির পর রাশিয়ার সুখোই এসইউ-৫৭ বিমান কেনার স্বপক্ষে যুক্তি আরও জোরালো হচ্ছে। উল্লেখ্য, এফ ৩৫-এর তিনটি ধরন রয়েছে। এফ ৩৫এ, এফ৩৫বি এবং সি। এফ ৩৫এ যুদ্ধবিমানের এক একটির দাম আট কোটি মার্কিন ডলার । এফ৩৫বি-এর একটির দাম সাড়ে ১১ কোটি মার্কিন ডলার এবং এফ ৩৫সি ভ্যারিয়ান্টের একটির দাম ১১ কোটি মার্কিন ডলার।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com