ইসরায়েলের বাত ইয়ামে একটি আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি। ছবি সৌজন্য: সানাদ
টানা সপ্তম দিনের মতো ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে বাজছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেন। ইরানের পরমাণু, সামরিক ও অন্যান্য স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলার জবাবে এই পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে ইরান। বুধবার সকালেও মধ্য ইসরায়েলে একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ইরানের ফার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল উত্তর ইসরায়েলের মেরন বিমানঘাঁটি।
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে ইরানি হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪০ ছাড়িয়েছে।
যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রকাশে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে। এর ফলে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলার খবর পুরোপুরি প্রকাশ করা হয় না বা নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রকাশ করা হয়।
তবে আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট ‘সানাদ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি, ভিডিও এবং ধ্বংস হওয়া স্থানের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হামলার কথা তুলে ধরেছে।
শনিবার তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ‘কিরিয়া’ ('ইসরায়েলের পেন্টাগন' নামে পরিচিত) থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে একটি লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত সরকারি কমপ্লেক্সগুলোর একটি, যেখানে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও গোয়েন্দা দপ্তর অবস্থিত।
আরেকটি হামলা চালানো হয় তেল আবিবের দক্ষিণে রেহোভোতে অবস্থিত ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা কেন্দ্র 'ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স'-এ। এই প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে জড়িত বলে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইরানের হামলার পর ‘ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’ এ আগুন। ছবি সৌজন্য: সানাদ
তেল আবিব মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন স্থানেও হামলা চালানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী শহর রামাত গানে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কয়েকটি টাওয়ার ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে নয়টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
পেতাহ তিকভা শহরে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় হামলা হয়েছে। বনেই ব্রাক শহরে ধ্বংস হয়েছে একটি ধর্মীয় স্কুল।
তবে তেল আবিবের দক্ষিণে বাত ইয়াম শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সেখানে নয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। রিশন লেজিওন শহরেও একাধিক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
উত্তর ইসরায়েলের হাইফা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির বৃহত্তম তেল শোধনাগার 'বাজান পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সে' আঘাত হানে। এর জেরে তেল শোধনাগারটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। হাইফার নেভে শা'নান এলাকার আবাসিক ভবনেও আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।
উত্তরের তামরা শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একই পরিবারের চারজন আরব নারী নিহত হয়েছেন। ৩৫ হাজার মানুষের এই শহরটি মূলত আরব অধ্যুষিত। উল্লেখ্য, ইসরায়েলের অন্যান্য অনেক ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত শহরের মতো তামরাতেও পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের অভাব রয়েছে।