যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর ঘোষণা না দিলেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা এখন ইরানের আকাশ পুরোপুরি এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্যে ‘আমরা’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ইরানের কাছে আকাশ নজরদারির ভালো প্রযুক্তি ও প্রচুর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ছিল, কিন্তু সেগুলো আমেরিকান তৈরি “জিনিসপত্রের” সঙ্গে তুলনীয় নয়। ভালোভাবে কেউ কিছু করলে সেটা করে আমেরিকা-পুরোনো দিনের সেই আমেরিকা।’
এদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জেডি ভ্যান্স বলেন, ইরান নাগরিক প্রয়োজনে ব্যবহারে জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা উদ্বেগজনক। তার ভাষায়, এই সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, সর্বশেষ দফার হামলায় ইরানি বাহিনী ইসরায়েলের দিকে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
আজ মঙ্গলবার ইরান দফায়-দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘাত শুরুর প্রথম দিকের তুলনায় গত দুই দিনে একসঙ্গে কমসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান। শুরুর দিকে প্রতিটি দফায় ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।
‘খামেনির পরিণতি হতে পারে সাদ্দাম হোসেনের মতো’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ।
ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ কথা জানায়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালিয়ে ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। ২০০৬ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি ইরানের স্বৈরশাসককে সতর্ক করছি, যেন তিনি যুদ্ধাপরাধ করা এবং ইসরায়েলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া বন্ধ করেন।”
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “ইরানের প্রতিবেশী এক দেশের স্বৈরশাসক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একই পথ বেছে নিয়েছিল, খামেনি তার (সাদ্দাম হোসেন) পরিণতি মনে রাখলেই ভালো করবেন।”
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ কথা জানিয়েছেন।
আল–জাজিরার খবর বলা হয়, নিয়মিত ব্রিফিংয়ে পেসকভ বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত বন্ধে প্রয়োজনে রাশিয়া মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।
তবে পেসকভ বলেন, “বর্তমানে আমরা অন্তত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মধ্যস্থতা গ্রহণ বা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে যাওয়ার আগ্রহ দেখছি না।”
ইরান রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও, রাশিয়া বহু বছর ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইসরায়েলকে দূরে ঠেলে না দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে মস্কো।
মস্কোর স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসের সহকারী অধ্যাপক নিকোলাই সুরকভ আল জাজিরাকে বলেন, রাশিয়া একটি অত্যন্ত জটিল ভারসাম্যের খেলা খেলছে। দেশটি আন্তরিকভাবেই একটা রাজনৈতিক সমাধান চায়।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন চীনের প্রেসিডেন্ট
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাত শুরুর পর এই প্রথমবার মুখ খুললেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। তিনি বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে ‘হঠাৎ উত্তেজনা বৃদ্ধি’ পাওয়ায় চীন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মিত্র চীন।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন ‘অন্য কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘনকারী যেকোনো কর্মকাণ্ডের’ বিরোধিতা করে। তিনি আরও বলেন, সামরিক সংঘাত কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত স্বার্থে নয়।
কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। তিনি সেখানে দ্বিতীয় চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, সব পক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব এই সংঘাত প্রশমনে কাজ করতে হবে। চীন শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ‘গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত’।