খুলনা: ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নিয়ে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪০-৪৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এ সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় খান জাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন সংঘর্ষের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত সাতজন শিক্ষক জানান, সকালে ছাত্রদল কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা ‘কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে না’, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরও একটি গ্রুপ রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদ করায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
ওসি কবির হোসেন বলেন, “কুয়েটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০-৪৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী কাজ করছে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্তত তিন কর্মী বলেন, ছাত্রদল কুয়েটের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। স্থানীয়রাও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
তারা বলেন, “আজ আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে তারা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকের মাথায় আঘাত লেগেছে। আমরা কোনো অবস্থাতেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি ফিরতে দেবো না।”
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সদস্যসচিব তাজিম বিশ্বাস বলেন, “ছাত্রশিবির এবং পতিত সরকারের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের যেসব নেতা-কর্মী এখনো আছে, যাদেরকে আমরা চিনি, তারাই মূলত আমাদের ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর প্রথমে হামলা করেছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুয়েটের সদস্যসচিব জাহিদুর রহমান বলেন, “আমাদের গুরুতর আহত ৫০ জন শিক্ষার্থী। কমবেশি আহত ধরলে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০–এর বেশি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, “কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ স্টাইলে যে নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনার পথেই অগ্রসর হলো।”
খুলনার খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।