শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫ ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
 
বিদেশ
গাজায় ১ দিনে নিহত ৮২





পালাবদল ডেস্ক
Friday, 11 July, 2025
1:21 PM
 @palabadalnet

গাজার খান ইউনিসে স্ত্রী আসিয়া, সন্তান ইয়াহিয়া, মুসা ও ইব্রাহিমের জানাজা পড়ছেন মাগদি জাদাল্লাহ ও পাড়া প্রতিবেশীরা। তারা সবাই একই বাড়িতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ছবি: রয়টার্স (১০ জুলাই, ২০২৫)

গাজার খান ইউনিসে স্ত্রী আসিয়া, সন্তান ইয়াহিয়া, মুসা ও ইব্রাহিমের জানাজা পড়ছেন মাগদি জাদাল্লাহ ও পাড়া প্রতিবেশীরা। তারা সবাই একই বাড়িতে রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ছবি: রয়টার্স (১০ জুলাই, ২০২৫)

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৈঠক শেষে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চালুর আশ্বাস দেন তিনি। তবে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও থেমে নেই ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল ও তুরস্কের সরকারি গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। 

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেও হামলা অব্যাহত

কাতারের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। পরোক্ষ বৈঠকে হামাস ও ইসরায়েল তাদের শর্তগুলো উপস্থাপনের পর দরকষাকষি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু থেমে নেই ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ।

গতকাল বৃহস্পতিবার গাজাজুড়ে হামলায় ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাদের মধ্যে অন্তত নয় জন ইসরায়েলি সংগঠন গ্লোবাল হিউম্যানিট্যারিয়ান ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম থেকে সহায়তা নিতে এসে প্রাণ হারান।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হয় প্রায় ২৫০ মানুষ। সেদিনই গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২১ মাসের সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

এসব হামলায় আহতের সংখ্যা এক লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৬।

শিগগির যুদ্ধবিরতির আশ্বাস দিলেন নেতানিয়াহু

যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে আসার আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউসম্যাক্সের সাংবাদিক গ্রেটা ভ্যান সাসটেরেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “আমি আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে আমরা এটা (যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা) শেষ করতে পারব।”

“সম্ভবত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চালু হবে। জিম্মিদের প্রথম দলটি মুক্তি পেলে আমরা এই ৬০ দিনকে কাজে লাগিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করব।”

চার দিনের সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে দুইবার বৈঠক করেন নেতানিয়াহু।

“এটা আগামীকালই শেষ হতে পারে-আজকেও হতে পারে। যদি হামাস তাদের অস্ত্র নামিয়ে মাটিতে রাখে।”

“আমরা মনে করছি, যুদ্ধ শেষ হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। আমি বলতে চাই না যে এই যুদ্ধের এমন কোনো লক্ষ্য বাকি আছে যা আমরা অর্জন করতে পাড়ব না। আমরা এসব দানবদের পরাজিত করব এবং জিম্মিদের ফিরিয়ে আনব”, যোগ করেন নেতানিয়াহু।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু এবারের সফরে তিনটি সাক্ষাৎকার দেন। তবে সফরকালে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি একবারও কথা বলেননি।

যুদ্ধের স্থায়ী অবসান চায় ট্রাম্প প্রশাসন

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, ৬০ দিনের এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাবে, বন্ধ হবে ইসরায়েলের হামলা, এমনটাই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যাশা। 

তবে এ ধরনের প্রত্যাশা বা দাবির বিষয়টি উড়িয়ে দেন নেতানিয়াহু।

ভিডিও বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, “প্রথমবার যখন যুদ্ধবিরতি হলো, আমাদেরকে বলা হয়েছিল "তোমরা আর যুদ্ধে ফিরবে না", কিন্তু আমরা ফিরেছি।”

“দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির পরও বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের যুদ্ধ আবার শুরু করতে পারবে না। কিন্তু আমরা সেটাও করেছি।”

“এখন তারা বলছে, তৃতীয় যুদ্ধবিরতির পর "তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে না"। আমার কি আর কিছু বলার আছে?”

বুধবার দুই সূত্র টাইমস অব ইসরায়েলকে জানান, ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের আশ্বস্ত করেছে যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে ইসরায়েলকে হামাসের বিরুদ্ধে আর লড়তে দেওয়া হবে না। তবে এই শর্ত বা আশ্বাস যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে উল্লেখ করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।  

চলমান আলোচনার কেন্দ্রে আছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে ইসরায়েল আবারও নতুন করে গাজায় সামরিক অভিযান চালাতে পারবে কী না, সে বিষয়টি নিয়ে।

মূলত, বাকি জীবিত জিম্মি ও মৃতদের মরদেহ হাতে পেলে গাজায় সর্বাত্মক হামলা চালানো থেকে ইসরায়েলকে কেউ বিরত রাখতে পারবে না, এমন আশংকা থেকেই এসব আলোচনার সূত্রপাত।

এখনো আলোচনায় চূড়ান্ত ফল আসেনি

বৃহস্পতিবারও আলোচনায় চুক্তি চূড়ান্তের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

হামাস বলছে, তারা এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত নয়, যেখানে ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা গাজায় মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি, গাজায় ত্রাণের প্রস্তাবিত প্রবাহ নিয়েও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটি আপত্তি জানিয়েছে এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার “নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা“ চেয়েছে।

এএফপিকে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাঈম বলেন, “ইসরায়েলিরা আমাদের ভূখণ্ড দখলে রাখতে চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে আমাদের জনগণ আত্মসমর্পণ করুক। তারা তাদেরকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে দূরবর্তী ও যোগাযোগবিচ্ছিন্ন জায়গায় রাখতে চায়। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।”

“দোহায় চলমান আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলের সামনে এ ধরণের একটি পরিকল্পনাই উপস্থাপন করেছে”, যোগ করেন তিনি।

হামাস আলাদা করে দক্ষিণ গাজায় মিশর সীমান্তে অবস্থিত রাফায় এবং খান ইউনিস ও রাফার মাঝে অবস্থিত তথাকথিত মোরাগ করিডরে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছে। 

ইসরায়েলের শর্ত মেনেই যুদ্ধের অবসান হতে হবে

তবে বৃহস্পতিবারের ভিডিওতে নেতানিয়াহু আরও জানান, গাজা যুদ্ধের স্থায়ী অবসান নিয়ে তিনি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় আলোচনায় আগ্রহী। হামাস ও ইসরায়েল একমত হলে এই আলোচনা সম্ভব।

তবে তিনি সতর্ক করেন, শুধু ইসরায়েলের শর্ত মেনেই গাজায় যুদ্ধের অবসান হতে পারে।

“হামাস অস্ত্র সমর্পণ করবে। গাজার নিরস্ত্রীকরণ হবে। হামাসের কোনো সরকার বা সামরিক সক্ষমতা থাকবে না। এগুলোই আমাদের মূল শর্ত”, যোগ করেন তিনি। 

কার্যত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের পুরো সময় জুড়েই এসব দাবি জানিয়ে এসেছেন নেতানিয়াহু, আর হামাস বরাবরই তা মানতে অস্বীকার করেছে।

তবে আত্মবিশ্বাসী নেতানিয়াহুর দাবি, কোনো না কোনোভাবে ইসরায়েলের লক্ষ্য পূরণ হবেই। 

“যদি দরকষাকষিতে লক্ষ্য পূরণ হয়, তাহলে খুবই ভালো। আর ৬০ দিনের দরকষাকষি যদি যথেষ্ঠ না হয়, তাহলে আমরা অন্যান্য উপায়ে লক্ষ্য পূরণ করব; সামরিক শক্তিমত্তা ব্যবহার করব, আমাদের বীরোচিত সেনাবাহিনীর সক্ষমতা কাজে লাগাব।”

অপরদিকে, বুধবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা গাজার চুক্তির খুব কাছে পৌঁছে গেছি।”

এর আগে নেতানিয়াহু বলেন, চুক্তি হবার ‘ভালো সম্ভাবনা’ আছে। পাশাপাশি, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সা’আর বলেন, “২১ মাসের তিক্ত যুদ্ধের পর চুক্তির শর্তে একমত হওয়া ‘অর্জনযোগ্য’ লক্ষ্য।”

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com