ঢাকা: অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে চলবে বিএনপি। সে জন্য অবিশ্বাস তৈরি হয়, আপাতত এমন কিছুতে না জড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সাম্প্রতিক দুটি ঘটনাকে সামনে রেখে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এর একটি হচ্ছে, লন্ডন বৈঠক এবং বৈঠক-পরবর্তী পরিস্থিতি। অন্যটি হচ্ছে, দলের নেতা ইশরাক হোসেনের আন্দোলন। এর মধ্যে ১৩ জুন লন্ডন বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা ১৪ জুন দেশে ফিরেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা এর নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
অপর দিকে আদালতের রায় পেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইশরাক হোসেন আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গত সোমবার থেকে শপথ ছাড়াই তিনি নিজ দায়িত্বে মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন। গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় নেতারা দুটি ঘটনার পর্যালোচনা করেন।
সভায় নেতারা অভিমত প্রকাশ করেন যে লন্ডন বৈঠকের পর ইশরাক হোসেন আন্দোলন থেকে পিছু হটলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে সরকারের সঙ্গে বিএনপির সব বিষয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। সমালোচকেরাও সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই রয়েশয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে। অবশ্য সভায় এই আলোচনাও হয় যে এই আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকলেও দল সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। এটাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ‘অভিভাবকশূন্য’ জনগণের আন্দোলন হিসেবে দেখাতে চান নেতারা।
ইশরাক হোসেনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ইশরাক হোসেন সর্বোচ্চ আদালতের রায় পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনও প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল আদালতের রায় মেনে তাকে মেয়র পদে শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা করা। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে, আদালতের রায়ের অবমাননা করা হয়েছে। আদালতের রায় বাস্তবায়ন হোক, এটাই আমরা চাই। এর বাইরে তো আমাদের কিছু বলার নেই।”
কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি যা-ই হোক, লন্ডন বৈঠকের পর নেতাদের সতর্কভাবে কথা বলা এবং সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়। নেতারা মনে করেন, সরকার প্রকৃতপক্ষে কী করতে চাইছে, তা সময়েই বলে দেবে। এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, “অবিশ্বাস করে ঠকার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকা শ্রেয়। লন্ডন বৈঠকের পর আমাদের কিছু সময় সরকারকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তারা কী করে।”