স্টিল আমদানিতে শুল্ক ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: বিবিসি
ঠিক আড়াই মাসের মাথাতেই আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নিশানায়’ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই দুই পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এবার তা এক ধাক্কায় বাড়িয়ে তা ৫০ শতাংশ করার বার্তা দিলেন। গত বুধবার থেকেই কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গ- এ এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, তার এই পদক্ষেপের ফলে স্থানীয় স্টিল ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী হবে ও জাতীয় সরবরাহ বাড়বে। পাশাপাশি চীনের ওপর নির্ভরতা কমবে।
ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, জাপানের নিপ্পন স্টিলের সাথে ইউনাইটেড স্টেটস স্টিল কর্পোরেশন বা ইউএস স্টিলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্টিল উৎপাদন খাতে আরও ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। তবে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা বাকি আছে বলেও জানান ট্রাম্প।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে তার সর্বশেষ এই ঘোষণা দিলেন।
“কোনো কারখানা বন্ধ কিংবা আউটসোর্সিং নয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি স্টিল কর্মী শিগগিরই তাদের প্রাপ্য পাঁচ হাজার ডলার বোনাস পাবেন,” স্টিল কর্মীদের এক সমাবেশে বলছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র-জাপান চুক্তি নিয়ে স্টিল কর্মীদের মধ্যে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো যে কীভাবে জাপান ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের চুক্তিকে সম্মান করবে। এ সংগঠনটিই বেতন ও নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।
ট্রাম্প বলেছেন তিনি তার প্রথম মেয়াদে স্টিল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে আমেরিকার সবচেয়ে বড় স্টিল উৎপাদক প্রতিষ্ঠান -ইউএস স্টিল কে রক্ষা করেছেন। এটি পিটসবার্গেই অবস্থিত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এখন ইউএস স্টিলকে বাঁচিয়ে রাখা নিশ্চিত করতে তিনি শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত করছেন।
“আমরা আবারো পেনসিলভানিয়ার স্টিলকে আমেরিকার মেরুদণ্ড হিসেব দাঁড় করাতে যাচ্ছি, যা আগে হয়নি,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্প এবার এই ঘোষণা এমন সময় দিলেন যখন তার বৈশ্বিক শুল্ক সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে আইনি লড়াই চলছে। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর তার শুল্ক নিয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
“স্টিল কর্মীদের জন্য এটা একটা ভালো দিন,” বিবিসিকে বলছিলেন ট্রাম্পের সমাবেশে অংশ নেয়া স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের একজন সদস্য জোবো বুর্গেস।
বুর্গেস পেনসিলভানিয়ার ওয়াশিংটনের মেয়র। তিনি নিপ্পন স্টিলের সাথে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এটি নতুন প্রজন্মের স্টিল কর্মী তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি একই সাথে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুল্ক বাড়ানোর কারণে তারা অনেক অর্থ আয় করতে পেরেছিলেন। যদিও বুর্গেস বলেছেন তিনি নির্বাচনে গত দুই দশক ধরে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে আসছেন।
“তবে আমি আমি আমেরিকান উৎপাদকদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টি নিয়ে কখনোই দ্বিমত পোষণ করি না,” বলেন তিনি।
তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রভাব বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বাজারে সংকট বেড়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের মধ্যে সম্পর্কেও ফাটল ধরছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দেশও রয়েছে।
শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তারা পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নিয়েছে।
শুক্রবার ট্রাম্প একই সাথে জেনেভায় চলতি মাসে হওয়া শুল্ক বিষয়ক সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন চীনের বিরুদ্ধে।
চীন অবশ্য পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভুল করাকেই দায়ী করেছেন। তারা বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
চীন স্টিল খাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদক। বিশ্বের অর্ধেক স্টিল তারা উৎপাদন করে। চীন, ভারত ও জাপানের পরেই এ খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প ১২৪ বছরের পুরনো আমেরিকার স্টিল কোম্পানি ইউএস স্টিলে বিদেশি দখলদারিত্ব বন্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে এখনো নিশ্চিত নয় যে জাপানের নিপ্পনের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব কীভাবে কাজ করবে এবং কারা কোম্পানিটির মালিকানায় থাকবে।
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা বলছেন ট্রাম্প নিপ্পনকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে রাজি করিয়েছেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ১৪ মাসে ১৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে নিপ্পন। অন্য খবরগুলোতে দেখা যাচ্ছে দুই কোম্পানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বোর্ডে ও নেতৃত্বে রেখেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে ইউএস স্টিলকে পরিচালনা করবে।
গাড়িশিল্পের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এমন ব্যক্তিদের একাংশের মতে, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে আমেরিকার চড়া শুল্কের জেরে সারা বিশ্বে এই দুই কাঁচামালের চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য কিছুটা বিঘ্নিত হবে। বাড়তি শুল্কের জেরে আমেরিকার বাজারে গাড়ির দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।