ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি ধাক্কা খেল আদালতে। বুধবার আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক একটি আদালত জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প তার যে আইনি বাধ্যবাধকতা, তার বাইরে বেরিয়ে কাজ করেছেন। অর্থাৎ, মার্কিন আইনসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না-করেই একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চলেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, দেশে জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা কী করে করতে হবে, তা অনির্বাচিত বিচারকেরা স্থির করে দিতে পারেন না।
উল্লেখ্য, এই ‘জরুরি পরিস্থিতি’র প্রসঙ্গ উত্থাপন করেই আদালতে শুল্কনীতি বলবৎ করার পক্ষে সওয়াল করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে ১৯৭৭ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট’কেও ঢাল করা হয়। কিন্তু আদালতের তিন বিচারক জানিয়ে দেন, আপৎকালীন এই আইনও প্রেসিডেন্টকে অন্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ করে আমেরিকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার চূড়ান্ত ক্ষমতা দেয় না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই আইন জরুরি অবস্থায় প্রেসিডেন্টকে কেবল কিছু প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষমতা দিয়েছে। এর অতিরিক্ত কিছু নয়।
গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের উপর ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, যে দেশ আমেরিকার পণ্যের উপর যত পরিমাণ শুল্ক চাপায়, ঠিক তত পরিমাণ শুল্ক আরোপ করা হবে সংশ্লিষ্ট দেশের রফতানি করা পণ্যে। আমেরিকায় রফতানি করা সমস্ত পণ্যে ১০ শতাংশ বনিয়াদি কর চাপানো হয়। তা ছাড়া যে দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে (যে দেশে আমেরিকায় বেশি পণ্য রফতানি করে, তুলনায় কম পণ্য আমদানি করে), সেই দেশের পণ্যে চড়া আমদানি শুল্ক চাপে। ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি ছিল, এর ফলে আমেরিকার স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ভারতের উপরেও চাপানো হয় ২৬ শতাংশ বাড়তি শুল্ক। তার পর এই সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৯ জুলাই।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কনীতির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল আমদানিকৃত পণ্যের উপর নির্ভরশীল আমেরিকার বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। শেষমেশ আদালত ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিপক্ষেই রায় দিল। তিন বিচারক জানিয়েছেন, ওই নীতির আইনগত দিক পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। আদালতের এই রায়ের পরেই চাঙ্গা হয়েছে মার্কিন ডলার। বুধবার তার মুদ্রামান ইউরো, ইয়েন এবং সুইস ফ্রাঙ্ককে ছাপিয়ে গিয়েছে। সে দেশের শেয়ার বাজারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখা গিয়েছে।