(বাঁ দিক থেকে) পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ফাইল ছবি
আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ পাকিস্তানের। শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে খুব শীঘ্রই রাষ্ট্রদূত পাঠাতে চলেছেন তারা। এর ফলে দুই দেশের বোঝাপড়া আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি। একাধিক সূত্রের খবর, দু’দেশের সম্পর্কে দূরত্ব কমানোর কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে চীন।
২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর সে অর্থে কাবুলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না ইসলামাবাদের। অবশ্য জাতিসংঘও তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে পড়শি দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক গত কয়েক মাসে কার্যত তলানিতে নেমে আসে।
বিদ্রোহী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর একাধিক হামলায় প্রায়ই অশান্ত হয়ে ওঠে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত। এই বিদ্রোহীদের তালিবান মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাকিস্তানের। অন্য দিকে, প্রথাগত কূটনৈতিক সম্পর্ক না-থাকলেও কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রেখেছে নয়াদিল্লি। এই পরিস্থিতিতে একাধিক ভূরাজনৈতিক কৌশল থেকেই চীন পাকিস্তান আর তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের দূরত্ব কমাতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কয়েক দিন আগেই বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে বৈঠক করেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং তালিবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। আপাত কূটনৈতিক ওই বৈঠকে তিন জনের রুদ্ধদ্বার আলোচনাও চলে। একাধিক সূত্রের দাবি, সেই আলোচনায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানকে পারস্পরিক দূরত্ব কমানোর আহ্বান জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুই দেশের এই কাছে আসার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের পহেলগাঁও কাণ্ডের পর তার নিন্দা করেছিল তালিবান সরকার। তার জন্য কাবুলকে ধন্যবাদও জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। ২০২১-এ আফগানিস্তানে জমানা বদলের পর পরিকল্পনামাফিক কাবুলকে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেনি ইসলামাবাদ। বরং ভারতের সঙ্গে তালিবান সরকারের সম্পর্ক মসৃণ হয়েছে, যা চীন এবং পাকিস্তান দু’পক্ষের কাছেই মাথাব্যথার কারণ।
তা ছাড়া বেইজিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই-এর অন্যতম অঙ্গ চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি)। বেইজিং মনে করছে, আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তকে অশান্ত রাখলে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আফগানিস্তানের সঙ্গে একচিলতে সীমান্ত রয়েছে চীনের। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থেই অশান্ত আফগানিস্তান চায় না বেইজিং। বরং চায় বন্ধু পাকিস্তান বিষয়টির উপর নজর এবং নিয়ন্ত্রণ রাখুক।
এখনও পর্যন্ত তিনটি দেশ তালিবানকে কূটনৈতিক স্বীকতি দিয়েছে। তারা হলো চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং উজবেকিস্তান। পাকিস্তান যদি কাবুলে রাষ্ট্রদূত পাঠায়, তবে তারা চতুর্থ দেশ হিসাবে আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথাগত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে। তবে পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রদূতের নাম জানায়নি। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি তালিবান সরকারও।
২০২১-এ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়ার পর আমেরিকা তো বটেই, পশ্চিমি দেশগুলির কোনো প্রভাব নেই সে দেশে। মনে করা হচ্ছে, চীন একাধিক লাভের অঙ্ক মাথায় রেখেই সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছে। ইতোমধ্যে চীন এ ব্যাপারে অনেকদূর এগিয়েছে।