সোমবার ২ জুন ২০২৫ ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সোমবার ২ জুন ২০২৫
 
দক্ষিণ এশিয়া
পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, অবশেষে স্বীকার করল ভারত





পালাবদল ডেস্ক
Saturday, 31 May, 2025
6:55 PM
 @palabadalnet

ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) অনিল চৌহান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) অনিল চৌহান। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে, অবশেষে মেনে নিলেন দেশটির সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান। এই প্রথম ভারতের তরফে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা মেনে নেওয়া হলো। সাংগ্রিলা বৈঠকে যোগ দিতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন সিডিএস। শনিবার সেখানেই ব্লুমবার্গ টিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত এবং ভারতের যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর দেননি অনিল। তবে তিনি যা বলেছেন, তাতে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সাক্ষাৎকারে অনিলকে প্রশ্ন করা হয়, “জেনারেল, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। পাকিস্তান কি ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিল? এক বা একাধিক?” সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেননি ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে যুদ্ধবিমান ধ্বংসটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেন সেটা ধ্বংস হল, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।” 

সাংবাদিক এর পর আরও জোর দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন, “তার মানে অন্তত একটি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ধ্বংস হয়েছিল?” সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলে অনিল ভারতীয় সেনার কৌশল ব্যাখ্যায় জোর দেন। বলেন, “ইতিবাচক দিক হলো, আমরা আমাদের কৌশলগত ভুলটা তখনই বুঝতে পেরেছি এবং তা শুধরে দু’দিন পর আবার সেই কৌশল প্রয়োগ করেছি। সব যুদ্ধবিমান আবার আমরা উড়িয়েছি এবং দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করেছি।”

এরপর ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের অন্তত ছ’টি যুদ্ধবিমান তাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেটা কি সত্যি? অনিলের জবাব, “একেবারেই নয়।” তবে কতগুলি যুদ্ধবিমান পাকিস্তানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিয়ে আর কিছু বলেননি অনিল। ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক এরপর আবার বলেন, “বিমান ধ্বংসের তথ্যটি গুরুত্বপূর্ণই নয়। কেন তা ধ্বংস হলো এবং তারপর আমরা কী করলাম, আমাদের কাছে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।”

৭ মে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের কোনো কর্মকর্তা বা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এটিই প্রথম সরাসরি বক্তব্য।

এই মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেন, তার দেশ ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে এই দাবি এখনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা হয়নি। ভারত সরকারও যুদ্ধবিমান হারানোর বিষয়ে এর আগে কোনো মন্তব্য করেনি।

গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষ ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাশাপাশি সীমান্ত বরাবর গোলাবারুদ ও হালকা অস্ত্র দিয়েও গুলিবিনিময় হয়।

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর দুই দেশের উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারতের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে ইসলামাবাদের নেতারা ভারতের অভিযোগ নাকচ করে দেন।

জেনারেল চৌহান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান, যেখানে ট্রাম্প বলেছিলেন-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে সাহায্য করেছে। তবে তিনি বলেন, যেকোনো পক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, এমনটা বলা ‘অত্যন্ত অতিরঞ্জিত’।

জেনারেল চৌহান বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রচলিত সামরিক অভিযান ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সীমার মধ্যে অনেক ফারাক আছে।”

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের পথ ‘সব সময় খোলা’ ছিল।

চৌহানের ভাষায়, উত্তেজনার ধাপে ধাপে আরও অনেক ছোট ছোট স্তর ছিল, যেগুলো ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করেই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব ছিল।

জেনারেল চৌহান চীন ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের এসব অস্ত্র ‘কাজই করেনি’।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা একটি গবেষণা সংস্থা এই মাসে জানিয়েছে, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও স্যাটেলাইট সহায়তা দিয়েছে চীন।

ভারতের সামরিক প্রধান বলেন, “কড়া আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমরা পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার গভীরে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিলাম।”

ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, তাদের বাহিনী পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে চায়। তবে ভবিষ্যতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, “আমরা পরিষ্কার লাল রেখা ঠিক করে দিয়েছি।”

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com