ঢাকা: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যুগের বেশি সময় আগে চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মীচারীকে পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ-সংক্রান্ত আপিল মঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ওই ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছিলেন। এমএলএসএস থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সমমর্যাদার বিভিন্ন পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ আদালতের রায়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
ওই ৯৮৮ জনের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর আপিল করার অনুমতি পায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন, মো. আসাদুজ্জামান ও মো. রুহুল কুদ্দুস শুনানিতে ছিলেন। অপর পক্ষে (চাকরিচ্যুতদের) ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়ের এজাজ মাস্উদ।
রায়ের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন বলেন, “আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জনের মধ্যে যাঁরা জীবিত আছেন, তারা প্রত্যেকেই চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। চাকরিচ্যুতি থেকে পুনর্বহালের দিন পর্যন্ত—এই সময়টাকে অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে। এই সময়ে তারা তাদের জ্যেষ্ঠতা পাবেন। অর্থাৎ জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ন হবে না। চাকরিচ্যুতদের ভোগান্তি ও মানবতার দিক বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের সুবিধাদির বিষয় নির্ধারণ করার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।”
আপিল বিভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল মঞ্জুর করেছেন জানিয়ে অপর পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়ের এজাজ মাস্উদ বলেন, “আপিল বিভাগের দেওয়া (১৯ মে ২০১৬) রায় বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্টের যে রায়ে তাদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরি গিয়েছিল, সেটিও বাতিল করা হয়েছে। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলা হয়েছে।”
মামলার পূর্বাপর
আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পান। ওই নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট আদালত রিট (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন। পরে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক। শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ওই জনবলকে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে দ্বিতীয় রায়ের বিরুদ্ধে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপিল বিভাগে পৃথক আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। এর শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের উভয় রায় বাতিল ঘোষণা করে পুনরায় রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পুনরায় শুনানি নিয়ে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২০০৪ সালে কয়েকটি পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তির আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা আহ্বান করে ২০১২ সালের এপ্রিলে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে লিভ টু আপিল করেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করেন। হাইকোর্টের (২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেওয়া) রায় বহাল থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত বছর পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে। রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর (আপিল করার অনুমতি) করেন। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর আপিল করে। এই আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দিলেন আপিল বিভাগ।