ঢাকা: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এই প্রথম কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিলে খালাস পেলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে খালাস চেয়ে আজহারুল ইসলামের করা আবেদন মঞ্জুর করে এ রায় দিয়েছেন।
এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজহারুল ইসলামকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় এবং ওই রায় বহাল রেখে অতীতে আপিল বিভাগের দেয়া রায় বাতিল ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। একইসাথে তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া না থাকলে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
রায়ে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে আজহারুল ইসলামের করা আপিল আবেদনটি মঞ্জুর করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সব অভিযোগ থেকে তাকে খালাস করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আগের দুই রায় বাতিল করে বর্তমান আপিল বিভাগ বলেছে, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অতীতের বিচারে আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ এই মামলায় ছিল, তা অতীতের আপিল বিভাগ সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
খালাসের রায়ের পর তাৎক্ষণিকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ মামলার আইনজীবীরা।
আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সকল অভিযোগ থেকে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। এখন থেকে তিনি ইনোসেন্ট ম্যান। আমরা মনে করি এ রায়ের মাধ্যমে সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে।”
দুপুরেই আপিল বিভাগের রায়ের সংক্ষিপ্ত কপি প্রকাশ হয়েছে। নিয়মানুযায়ী এ রায়ের কপি পাঠানো হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেখান থেকে এই কপি আজহারুল ইসলাম যেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, সেই বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হবে। এরপরই আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে মুক্তি পাবেন মি. ইসলাম।
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আজ এই রায় দিয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী ও সেসময়ের প্রশাসনে থাকা ব্যক্তি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের প্রক্রিয়া চলছে। একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দাখিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশোধনী আনা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে।
রায়ের পর্যবেক্ষণ ‘গ্রস মিসক্যারেজ অব জাস্টিস’
মঙ্গলবার সকাল দশটা ৫০ মিনিটে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। কার্য তালিকার প্রথমেই রায়ের জন্য এ মামলাটি ছিল। রায় ঘোষণার সময় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা আপিল বিভাগে উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিলে আদালতে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে এ মামলায় অতীতের রায়ে ‘গ্রস মিসক্যারেজ অব জাস্টিস’ অর্থাৎ বিচারের নামে ব্যাপক অবিচার হয়েছে।
আজহারুল ইসলামের আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, “রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে এ মামলায় গ্রস মিসক্যারেজ অব জাস্টিস হয়েছে।”
‘সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচিত হয়নি’
রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলেন আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির জানান, আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমাণ 'এসেসমেন্ট' করা ছাড়াই মি. ইসলামকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল।
শিশির মনির বলেন, “পর্যবেক্ষণে এ বিষয়টি উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেছে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি ট্রাভেস্টি অব ট্রুথ অর্থাৎ বিচারের নামে অবিচার।”
যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থিত করা হয়েছিল “অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে।” এর ফলে তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এই আইনজীবী।
“বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে”বলেন শিশির মনির।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার চলাকালে যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছিল, সেগুলো পরবর্তীতে আপিল শুনানির সময় বিবেচিত হয়নি বলে জানান আইনজীবীরা। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অতীতের রায়ে সাজা দেয়া হয়েছিলে বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির। তিনি জানান, এ মামলায় যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তাতে সাক্ষীরা আদালতে এসে বলেছেন কেউ তিন কিলোমিটার কেউ ছয় খিলোমিটার দূর থেকে আজহারুল ইসলামকে দেখেছেন।
“একজন সাক্ষীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার সন্তানের নাম কি, ছেলেমেয়ের নাম বলতে পারে না। স্ত্রীর নাম বলতে পারে না কিন্তু এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম বলতে পারে” বলেন শিশির মনির।
তিনি বলেন, “আগের রায়ে যে সমস্ত ফাইন্ডিং ছিলো, এই মিথ্যা সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে যে সমস্ত সাজা দেয়া হয়েছিল আজকের এ রায়ে সবই অসত্য প্রমাণিত হলো এবং তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো।”
‘আন্তর্জাতিক আইনের অনুপস্থিতি’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত এ মামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনের একটা ট্রায়াল।
আইনজীবী সিদ্দিক জানান, “এটা যে ইন্টারন্যাশনাল ল'য়ের একটা ট্রায়াল। এখানে যে ইন্টারন্যাশনাল ল কন্টিনিউ করা উচিত ছিল সেটা এখানে হয়নি.. বলেছে আদালত।”
“অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার পদ্ধতি বদলে দেয়া হয়েছিল, এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভু “ উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির।
কবে মুক্তি ?
এ রায়ের ফলে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে আর বাধা নেই। আজকে অথবা আগামীকালের মধ্যেই মুক্তি মিলবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগের রায়ে অন্য কোন মামলা না থাকলে তাকে দ্রুত মুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইসলামের মুক্তির জন্য রায়ের একটি আদেশ চাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মি. মনির বলেন, “আমরা একটা এডভান্স অর্ডার চেয়েছি। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।“
“আদালত বলেছেন আমরা চেষ্টা করবো আজকেই যেন এবং আজকে এবং কালকের মধ্যে যেন এই শর্ট অর্ডারটা প্রসেস হয়ে এটিএম আজহারুল সাহেব মুক্তি পেতে পারেন এজন্য সকল আইনি ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো“ বলেন শিশির মনির।
‘সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান’
রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ টি এম আজহারুল ইসলামের আইনজীবীরা। জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান ও ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী শিশির মনির।
তিনি বলেন, “আমরা এটা মনে করি এ রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে। এ রায়ের ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।”
শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এখন পর্যন্ত একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির ছয়জন শীর্ষ পর্যায়ের নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অন্ততপক্ষে আরো পাঁচজন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, “দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের সামিল।”
প্রসিকিউশন যা বলছে
আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরুর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বর্তমান প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম আদালতে একটি আবেদনের সংক্ষিপ্তসার জমা দেন। এই আবেদন আগেও একবার জমা দেয়া হয়েছিল তবে কিছু সংশোধনী এনে তা আবার জমা দেওয়া হয়।
আজকের রায় প্রসিকিউশন মেনে নিয়েছেন উল্লেখ করে গাজী এম এইচ তামীম বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে আমরা মেনে নিয়েছি এবং মেনে নিতে আমরা বাধ্য।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেয়ার ক্ষেত্রে যে সংশোধিত আবেদন জমা দেয়া হয়েছে সেটি সম্পর্কে গাজী এম এইচ তামীম বলেন, “ ট্রাইব্যুনালের যে রায় এবং যে বিচার সেক্ষেত্রে অ্যাপিলেট ডিভিশন ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই মামলাটা নিষ্পত্তি করবেন এবং আপিল বিভাগের দেয়া যে কোনও আদেশ আমরা মেনে নিব আজকের এই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।”
বর্তমানে যে মামলাগুলো বিচারধীন আছে অথবা ভবিষ্যতে যে মামলাগুলোর বিচার হবে, সেগুলোতে প্রভাব পড়ে এরকম কোনো আদেশ যেন দেওয়া না হয়, আদালতের কাছে সেই অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান এই প্রসিকিউটর।
তবে এ মামলার সবশেষ ধাপ রিভিউ পর্যায় হওয়াতে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের আর কোনো আইনি পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
গাজী এম এইচ তামীম বলেন, “এই মামলা যেহেতু রিভিউ থেকে আপিলে এসেছে, তাই এর ওপরে বাংলাদেশের আর কোনো আদালত বা আন্তর্জাতিক ফোরাম নেই।“
তিনি মনে করেন এই রায়ের মাধ্যমে বর্তমান বিচার পদ্ধতি আরও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে।
“জাতি এবং সারা পৃথিবী এখন ট্রাইব্যুনালে এই রায়ের আলোকে যে বিচারগুলা দেখবে সে ব্যাপারে আর প্রশ্ন ওঠার কোনো সুযোগই থাকলো না” দাবি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম।
‘আগের রায় পুনর্বিবেচনায় রিভিউ বোর্ড গঠন’
এটিএম আজহারুল ইসলামের রিভিউ মামলার শুনানিতে বিভিন্ন সময়ে তার আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া অন্যান্য রায়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
যেহেতু আজ অতীতের রায়কে বাতিল ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক আইনানুসারে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি বলে সর্বোচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সে কারণে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়েও পর্যবেক্ষণ থাকবে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
আজহারুল ইসলামের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “আমরা মনে করি এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় বের হয়ে যাওয়ার পর অতীতের রায় সম্পর্কে এ রায়ে অনেক অবজারভেশন থাকবে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে একটা রিভিউ বোর্ড গঠন করে অতীতের রায়গুলোকে পুর্নবিবেচনা করা।”
“যেন মৃত্যু পরবর্তীতে হলেও যাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছিল তাদের পরিবার, তাদের দল যেন এবং এ দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে“ বলেন শিশির মনির।
আইন উপদেষ্টার মন্তব্য
রায় ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি লিখেছেন, নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
এই রায়ের কৃতিত্ব উল্লেখ করে ওই পোস্টে আসিফ নজরুল লিখেছেন, “এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কৃতিত্ব জুলাই গণ আন্দোলনের অকুতোভয় নেতৃত্বের। এই সুযোগকে রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আমাদের সবার।”
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া
শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।
দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আল্লাহ কোরআনে বলেছেন সত্যের বিজয় হবে, মিথ্যা দূরীভূত হবে এবং মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী। আজকের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে এই সত্যই প্রমাণ হয়েছে।”
মামলার পূর্বাপর
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এখনও কারাগারে রয়েছেন আজহারুল ইসলাম।
তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে অভিযোগ গঠন করে বিচার করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন এবং ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগে তার বিচার হয়েছিল। জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে উত্তরে রংপুর অঞ্চলে এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগে বিচার হয়েছে। একইসাথে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগও ছিল। রংপুর অঞ্চলে তৎপরতাকে ঘিরেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো ছিলো।
সে সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন আজহারুল ইসলাম।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরের বছরের ২৮ জানুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন আজহারুল ইসলাম। এ আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ২০২০ সালের জুলাইয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম।
আবেদনটির শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি 'লিভ মঞ্জুর' করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। ওই আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস করে রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।