বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫
 
অর্থ-বাণিজ্য
বিনিয়োগ নিয়ে বিডার সভায় ১৭ রাজনৈতিক দল, অংশ নেয়নি বিএনপি





Tuesday, 13 May, 2025
11:37 PM
 @palabadalnet

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ শুনতে মতবিনিময় সভা করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সৌজন্যে

দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ শুনতে মতবিনিময় সভা করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সৌজন্যে

ঢাকা: দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ শুনতে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যোগ দিলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অংশ নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি বলেছে, বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বর্তমানে যা চলছে সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। তাদের উচিত নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিডা কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

বিডা সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ১৯টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১৭টি দল থেকে শীর্ষ নেতা বা প্রতিনিধি অংশ নেন। বিএনপি ও বিজেপির কেউ ছিলেন না। বিডা সূত্রে জানা যায়, সভায় অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

বিএনপি ও বিজেপি ছাড়া সভায় অংশ নেওয়া দলগুলো ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।

আমন্ত্রণ জানানোর পরও সভায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা দেখছি ক্রমাগতভাবে দেশে বিনিয়োগ কমছে, শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে। কারণ, বিনিয়োগকারীরা নির্বাচন ও রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেটির জন্য নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। অন্য কিছু করে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না।”

“অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগের নামে এক ধরনের সার্কাস চলছে। এতে বরং বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।”

এদিকে, সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এম আকাশ বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক সরকারের ধারাবাহিকতা জরুরি। বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা চান। সেই নিশ্চিয়তা না পেলে তাঁরা বিনিয়োগ করতে চাইবেন না।

‘বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে’

সভায় সূচনা বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ। এটি দলীয় বা রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে। দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিডা কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী সংকট রয়েছে। এসব সংকট থেকে উদ্ধারের জন্য আমরা এখন কী করছি, সামনের ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে কী করব এসব বিষয়ে আলোচনা করছি।’

আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি মাথায় রেখেই বিভিন্ন দেশ ও বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি।’

সভার শুরুতে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের কিছু চিত্র তুলে ধরেন বিডার ব্যবসা উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান। তিনি জানান, দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু সংস্কার ও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

কোন দল কী বলেছে

সভায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে স্বাগত জানাই। তবে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’

ব্যবসার উদ্যোগ বা বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশগত বিষয়, যুব কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপরে জোর দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বিনিয়োগ উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে যুব কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তো আগের মতোই আছে। ফলে বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে। বিনিয়োগ কম হওয়ার পেছনে এখনো হয়রানি একটা বড় কারণ। ব্যাংকঋণ নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় ঋণ পায় না; আর যারা টাকা বেশি চুরি করে তারা বেশি ঋণ পায়।

জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ আনার পরামর্শ দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এম আকাশ বলেন, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে যেন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ না হয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব সৈয়দ এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, দেশে এখন প্রধান সমস্যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। স্থানীয় পর্যায়েও একটা ব্যবসা শুরু করতে হলে ১৮টি জায়গা থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। আর প্রতিটি জায়গায় টাকার বান্ডেল দিতে হয়।

দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ইকোনমিক চার্টার তৈরির পরামর্শ দেন এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com