আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে আদালতে হাজির করে মিরপুর থানার একটি হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। পরে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ছবি: পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী মমতাজ বেগমকে আজ মঙ্গলবার আদালতে তোলা হবে-এ খবর অনেকেই জানতেন। এ জন্য সকাল ১০টার পর থেকেই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে থাকে। সকাল থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরাও আদালতের সামনে আসতে থাকেন। বেলা দুইটার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মমতাজকে ডিবি কার্যালয় থেকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসে। তখনো আদালতের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল।
বেলা তিনটার পর মমতাজকে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়। পরে তাকে যখন লিফটে করে নিচতলা থেকে সাততলায় নেওয়া হয়, তখন আদালতকক্ষ আইনজীবীদের উপস্থিতিতে ঠাসা। আদালতে তোলার পর কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়ান মমতাজ। মিরপুর থানায় করা সাগর হত্যা মামলায় তাকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। পিপি মমতাজের বিরুদ্ধে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। মমতাজ বেগম ছিলেন নির্বিকার।
মমতাজের পক্ষে একজন আইনজীবী থাকলেও শুনানির সময় তিনি আদালতে কোনো কথা বলেননি। কথা বলেননি মমতাজও। কেবল কাঠগড়ার লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিমর্ষ মমতাজ। শুনানি শেষ হলে বিচারক মমতাজকে চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। তখনো মমতাজ ছিলেন নির্বিকার।
বিকেল চারটায় কড়া পুলিশ পাহারায় মমতাজকে সাততলা থেকে লিফটে করে নিচতলায় আনা হয়। তখন তাঁকে ঘিরে ধরেন উৎসুক আইনজীবী, জনতা ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে মমতাজকে আদালতের সামনের রাস্তা দিয়ে দ্রুত হাঁটিয়ে হাজতখানার ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। এর ২ মিনিট পর উৎসুক এক ব্যক্তি ‘মমতাজের একজোড়া জুতা’ আদালতের হাজতখানার প্রধান ফটকে পড়ে থাকার তথ্য জানান।
এ বিষয়ে ঢাকার আদালতে কর্মরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মমতাজকে যখন আদালতে তোলা হয়েছিল, তখন তার পায়ে জুতা ছিল; কিন্তু আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে আসার সময় লোকজনের ভিড়ে কী ঘটেছে, সেটি তিনি জানেন না।
আদালত মমতাজ বেগমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার পর তাকে সাততলা থেকে নামিয়ে আদালত ভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে পাশের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর হাজতখানার সামনে তার জুতা জোড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে
‘শিল্পী হয়েও মমতাজ ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী’
মমতাজকে আদালতকক্ষে তোলার পর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা কেউ আদালতে হট্টগোল করব না। কেউ আসামিকে নিয়ে কটূক্তি করব না। আসামিপক্ষ থেকে কেউ এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে আদালতের পরিবেশ নষ্ট হয়।”
এরপর পুলিশের একজন কর্মকর্তা মমতাজের বিরুদ্ধে করা সাগর হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন। রাষ্ট্রপক্ষে আরও যুক্তি তুলে ধরেন পিপি ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, “মাননীয় আদালত, আপনার সামনে উপস্থিত আসামি মমতাজ একজন শিল্পী। শিল্পীর গান শুনে মানুষ তাকে পছন্দ করে। তখন মানুষ কোনো দল দেখে না। তখন কোনো কোনো শিল্পী হয়তো মনে করেন, তাকে মানুষ সবার ওপরে স্থান দিয়ে রেখেছে, মানুষ আমাকে ভালোবাসে। কোনো কোনো শিল্পী জনগণের পক্ষে কাজ করে যান, আজীবন সেই শিল্পীকে মানুষ মনে রাখে, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।”
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে আরও বলেন, “মাননীয় আদালত, শিল্পী মমতাজ সব থেকে বড় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করেছেন। ভোটচোরের সঙ্গী হয়েছেন। হাসিনার ফ্যাসিজম টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে গেছেন। ভোট চুরি করে এমপি হয়েছেন।”
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “মমতাজ সংসদে হাসিনার প্রশংসা করে গান গাইতেন। তিনি খালেদা জিয়া, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন। তিনি গণভবনে গিয়েও শেখ হাসিনাকে গানও শোনাতেন।”