ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল। ছবি: এপি
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে আমেরিকা। গতকাল শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত আমেরিকা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন।
তবে আজ শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তাদের দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে। দুই দেশের মধ্যে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ বজায় রাখতেও তারা আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “আমেরিকাে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত আমাদের মহান দেশে আর বাঞ্ছিত ব্যক্তি নন।”
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের এক্স হ্যান্ডলে ‘@POTOUS)’-এর কথা উল্লেখ করেন মার্কো রুবিও লেখেন, “রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল ‘বর্ণবাদকে অন্যায্যভাবে ব্যবহারকারী একজন রাজনীতিক’ যিনি আমেরিকা ও ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন।”
মার্কো রুবিও এক্সের পোস্টে আরও বলেন, “তার (রাষ্ট্রদূত) সঙ্গে আমাদের আলোচনার কিছু নেই। সুতরাং তিনি আমেরিকাে (পারসোনা নন গ্রাটা) অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।”
আমেরিকা থেকে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘটনা খুবই বিরল। তবে ওয়াশিংটন ও প্রিটোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সর্বশেষ ঘটনা মনে হচ্ছে এই রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আইনের কথা উল্লেখ করে ওই দেশে আমেরিকাের সহায়তা বন্ধ করে দেন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ওই আইন ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি জব্দ করে নেওয়া হচ্ছে।
গত মাসে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের আমেরিকায় স্বাগত জানিয়ে দুই দেশের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য স্বাগত জানিয়ে অভিযোগ তোলেন, সে দেশের সরকার শ্বেতাঙ্গ মানুষের জমিজমা ‘জব্দ করছে’।
ট্রাম্প তার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যেকোনো কৃষক (পরিবারসহ) পালিয়ে যেতে চাইলে আমেরিকায় তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।”
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ধনকুবের ইলন মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, রামাফোসার সরকার ‘স্পষ্টত বর্ণবাদী মালিকানা আইন’ তৈরি করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমির মালিকানা ইস্যু নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। বর্ণাবাদবিরোধী আন্দোলনের অবসানের তিন দশক পরও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ ভূমির মালিক শ্বেতাঙ্গ মানুষ। এ নিয়ে আইন সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০ সম্মেলন চলাকালে রামাফোসা বলেছিলেন, গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তাকে ফোন করেছেন। তাদের মধ্যে ‘চমৎকার পরিবেশে’ কথাবার্তা হয়েছে।
রামাফোসা বলেন, তবে দুই দেশের সম্পর্ক পরে ‘কিছুটা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে’।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এক্স হ্যান্ডলে তার পোস্টের সঙ্গে রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের একটি নিবন্ধনের লিংক যুক্ত করে দেন। ওই নিবন্ধে গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলের বক্তব্য রয়েছে। ওই বক্তব্য অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সেমিনারে রাসুল ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন আন্দোলন হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ। আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান জাতিগত বৈচিত্র্যের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছে তার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ।
তরুণ বয়সে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন ইব্রাহিম রাসুল। তিনি গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরাইল সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।