যেন নর্দমায় পরিণত হয়েছে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী। ছবি : বাসস
ঢাকা: রাজধানীর ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী। যে নদীকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল ঢাকার নগরায়ণ, সেই বুড়িগঙ্গাকে আজ নর্দমায় পরিণত করেছে।
ঢাকার দক্ষিণ এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা নদী প্রতিনিয়ত দখল ও দূষণে তিলে-তিলে ধ্বংস হচ্ছে। এর কুচকুচে কালো পানি এতোটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে তা স্পর্শ করলে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। এর দুর্গন্ধের জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাস দুঃসাধ্য হয়ে গেছে।
বিগত ৩০-৪০ বছরের নগর জীবনের বিরূপ প্রভাবে দূষিত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা। ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার শিল্প বর্জ্য, কাঁচামাল বর্জ্য, পয়ঃনিষ্কাশন লাইন, ইট ভাটা, নদী দখলসহ বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মে নদীটি আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে বলে মনে করেন নদী বিশেষজ্ঞ আলিমুর রহমান।
গড়ে ৩০২ মিটার প্রস্থের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির ৯০ শতাংশ পানি সরবরাহ করে তুরাগ নদী।
কমপক্ষে ৯৯টি বর্জ্যের লাইন পড়েছে সেই তুরাগ নদীতে।
বিগত ২০১৬ সালে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর একটি নিরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়- প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার ঘনমিটারের বেশি বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। কামরাঙ্গীরচর থেকে নারায়ণগঞ্জের পাগলা পর্যন্ত প্রায় তিন শতাধিক পয়ঃনিষ্কাশন লাইন সংযোগ রয়েছে। নদীর তলদেশ জমেছে ১০-১২ ফুট পলিথিন।
মোঘলরা মনমুগ্ধকর বুড়িগঙ্গা নদীর জোয়ার ভাটার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে ঢাকা শহরকে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেছিল। কালের পরিক্রমায় পাল্টে গেছে তার রূপ।
পলিথিন, বর্জ্য, পুরাতন জাহাজের পোড়া তেল একে বিষে জর্জরিত করে ফেলেছে। দখলদারদের গ্রাস থেকেও রেহাই পায়নি এর খালগুলো। একসময়ের টলমলে পানির খালগুলো এখন হয় দুর্গন্ধযুক্ত নালায় পরিণত হয়েছে, না হয় অবৈধ দখলকারীর কবলে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। যেখানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ, দোকান আরও কত কি।
অথচ এই নদীকে কেন্দ্র করে ২২৭টি সংযোগ খাল ছিল যাদের অস্তিত্ব এখন আর পাওয়া যায় না। ৭০টি সাল শনাক্ত করা গেলেও পানি প্রবাহ হয় না বেশিরভাগ খাল দিয়ে।
ইকুরিয়ার খাল, হাসনাবাদ ও আবদার খাল, গদার বাঘ খাল, মান্দাইয়ের খাল, মসূরী খোলা এখন আর নেই।
বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে শুভাঢ্যা ও আটি বাজার খাল।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, যেকোনো মূল্যে খালগুলো উদ্ধার করা হোক এবং নাব্যতা সচল করা হোক। আগে খালগুলো দিয়ে নৌকার মাধ্যমে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বন্দর ও জেলাগুলোতে যাতায়াত করা হতো, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল করতে এই নদী ও খালগুলো বিরাট ভূমিকা রাখতো যা কালক্রমে হারিয়ে গেছে।
গ্রাম থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহে এ পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক খরচ বেড়ে গেছে। এর ফলে দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন নদী পথের চেয়ে সড়কপথে দ্রব্যমূল্যের যানবাহনে চাঁদাবাজি বেশি হয় যার প্রভাব দ্রব্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ফলে ক্রেতাকে বেশি দামে নিত্যপণ্য কিনতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই মারা পড়বে বুড়িগঙ্গা। বুড়িগঙ্গা মারা পড়লে পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে ঢাকা।