গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে মিডিয়া ব্রিফিং করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সাথে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন, সারাদেশে সংঘটিত সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত সরকারের শাসনামলে দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে তদস্থলে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন জাতির জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট চলছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াতে এখানে এসেছিলাম। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন করণীয় কী, সেই বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক যথাক্রমে উপদেষ্টা মোঃ নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বৈঠকে জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের ও মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোঃ সেলিম উদ্দিন।
বৈঠক শেষে জামায়াতের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলের দুর্নীতির শে^তপত্র প্রকাশ এবং মন্ত্রী/এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাসহ সকল দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে প্রমোশন বঞ্চিতদের দ্রুত প্রমোশন দেয়া ও সম্মানজনক পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। জোরপূর্বক অবসর প্রাপ্তদের চাকরিতে ফিরিয়ে আনা/চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, কোটা আন্দোলনের সমর্থনে আরব আমিরাতে বিক্ষোভকারী ৫৭ জন বাংলাদেশীকে সম্মানজনক পুনর্বাসন করতে হবে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতি সচল করার পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমিরে জামায়াত আরো বলেন, দেশের এই কঠিন মুহূর্তে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও সহায়-সম্পদে হামলা চালিয়ে কোনো কুচক্রী মহল যাতে পানি ঘোলাটে করতে না পারে, সেজন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে আসছে। যেহেতু বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছে, সেজন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের পাহারা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।
আমিরে জামায়াত বলেন, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির প্রশাসনকে সর্বতোভাবে সহযোগিত করে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বৈঠক শেষে দেয়া ব্রিফিং-এ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, উনারা কেবল বসলেন, মাত্র চার দিন হলো, আমরা দেখতে চাই উনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কীভাবে জাতিকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন। সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে করেন। যৌক্তিক সময়ে সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, আপনারা জানেন জাতির জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট চলছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াতে এখানে এসেছিলাম। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এখন করণীয় কী, সেই বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির এই ক্রান্তিকালে প্রধান উপদেষ্টার দাওয়াতে আমরা এসেছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা কাজ করছেন। সবাই সহযোগিতা করা প্রয়োজন। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাই নিয়ে সহযোগিতা করলে সমস্যার সমাধান হবে, দেশে শৃংখলা ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্য আমরা দোয়া করেছি।
নির্বাচন নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাত্রইতো তারা দায়িত্ব নিলেন। আমরা দেখতে চাই, তারা কীভাবে কাজ করছেন। আমরা আশা করবো, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব হামলা ধর্মীয় কারণে, নাকি রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। তারাও প্রতিবাদ করছেন যেন সব মামলাই ধর্মীয় বলে চালিয়ে না দেয়া হয়। তিনি বলেন, যারা লাঠি হাতে মন্দির পাহারা দিচ্ছে, তাদেরকেই এ সবের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিবিসি ইতিমধ্যে নিউজও করেছে, অনেক ঘটনাই ফেক। তিনি উল্লেখ করেন, যতই ষড়যন্ত্র হউক না কেন, ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিরোধ করবে।
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোন দলীয় বিষয় নিয়ে নয়, জাতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এসেছি। কেউ নিষিদ্ধ করলেই কোনো দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি। বিগত সরকার অনেক ভুল কাজ করেছে, তার মধ্যে এটাও একটা। তিনি উল্লেখ করেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থায়, আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল।