রবিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ৭ পৌষ ১৪৩২
রবিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
 
জাতীয়
ওসমান হাদি চিরদিন বাংলাদেশের মানুষের বুকের ভেতর থাকবে: প্রধান উপদেষ্টা





বাসস
Saturday, 20 December, 2025
9:48 PM
 @palabadalnet

প্রধান উপদেষ্টা আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শহীদ শরিফ ওসমান হাদির বিদায় নয়, বরং তার স্বপ্ন ও আদর্শ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করতেই মানুষ আজ একত্র হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “প্রিয় ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।”

আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামাজের জানাজায় অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “লাখ লাখ মানুষ আজ এখানে হাজির হয়েছেন। ঢেউয়ের মতো লোক আসছে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে কোটি কোটি মানুষ এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। সবাই তাকিয়ে আছে হাদির কথা শোনার জন্য। বিদেশে যারা বাংলাদেশি আছেন, তারাও হাদির কথা জানতে চান।”

হাদির স্বপ্ন পূরণ করতেই এই সমবেত হওয়া-উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজ আমরা প্রিয় হাদির বিদায় দিতে আসিনি। আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি। তুমি যা বলে গেছ, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। সেই ওয়াদা করার জন্যই আমরা একত্র হয়েছি। এই ওয়াদা শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, পুরুষানুক্রমে বাংলাদেশের সব মানুষ—যেখানে যে অবস্থানেই থাকুক-এই দায়িত্ব বহন করবে।”

হাদির মানবপ্রেম, মানুষের সঙ্গে তার সহজ সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এসব গুণের জন্যই সবাই আজ তার প্রশংসা করছে।

তিনি বলেন, “সেটা আমরা মনেপ্রাণে গ্রহণ করছি। এটা যেন আমাদের মনে সবসময় জাগ্রত থাকে, আমরা যেন সেটা অনুসরণ করতে পারি।”

বক্তব্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার প্রথম পংক্তি ‘বল বীর, উন্নত মম শির’ এর কথা উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “তুমি আমাদের এমন এক মন্ত্র কানে দিয়ে গেছ, যা বাংলাদেশের কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। এই মন্ত্র চিরদিন আমাদের কানে বাজতে থাকবে। বাংলাদেশের বড় মন্ত্র হয়ে তোমার এই মন্ত্র আমাদের জাতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।”

তিনি বলেন, “তোমার মন্ত্র ছিল-বল বীর, উন্নত মম শির!। এই মন্ত্র বাংলাদেশের সন্তানরা জন্মলগ্ন থেকে যত দিন বেঁচে থাকবে, নিজের কাছে বলবে—বল বীর, উন্নত মম শির!। আমাদের শির কখনো নত হবে না।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যে মন্ত্র তুমি দিয়ে গেছ, দুনিয়ার সব কাজে আমরা সেটা প্রমাণ করব। আমরা দুনিয়ার সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব, কারো কাছে মাথা নত করব না। যে মন্ত্র তুমি দিয়ে গেছ, আমরা সেটা পূরণ করে যাব।”

নির্বাচন ও রাজনীতির ক্ষেত্রেও হাদির রেখে যাওয়া শিক্ষার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “প্রিয় হাদি, তুমি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলে এবং সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে কীভাবে নির্বাচন করতে হয়, তারও একটা প্রক্রিয়া আমাদের জানিয়ে গেছ। কীভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হয়, কিভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়, কীভাবে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে মানুষের সঙ্গে বিনীতভাবে আচরণ করতে হয়—সবকিছুই তুমি শিক্ষা দিয়ে গেছ।”

এই শিক্ষাকে রাজনৈতিক জীবনে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করেছি। আমরা এই শিক্ষা চালু করতে চাই। আমাদের রাজনৈতিক জীবনে এটাকে নিয়ে আসতে চাই, যাতে হাদি আমাদের জীবনে স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “হাদি তুমি হারিয়ে যাবে না, এই জাতি তোমাকে ভুলতে পারবে না। যুগের পর যুগ ধরে তুমি এই জাতির সঙ্গে থাকবে, তোমার মন্ত্র বারবার তোমাকে মনে করিয়ে দেবে।”

বক্তব্যের শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজ হাদিকে আল্লাহর হাতে আমানত রেখে গেলাম। আমরা সবসময় তার কথা স্মরণে রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকব।”

ঝালকাঠির নলছিটি থেকে উঠে আসা ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদালয়ে শিক্ষকতা করতেন।

গত বছর জুলাই আন্দোলন শুরু হলে তাতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন তিনি। অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত আগস্টেই ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করেন তিনি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে-‘সব আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ।’ এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ভারতবিরোধী বক্তব্য দিয়েই একটি সমর্থক গোষ্ঠী গড়ে তোলেন হাদি।

প্রতিষ্ঠার পরপরই জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি ও শহীদ–আহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি তুলে শাহবাগে সমাবেশ আয়োজন শুরু করেন হাদি। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোয় ডাক পেতে থাকেন। প্রথমে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিতেন তিনি, পরে নেন আহ্বায়কের দায়িত্ব।

কোনো রাজনৈতিক দলে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না ওসমান হাদি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ওই প্ল্যাটফর্মের বেশির ভাগ সদস্য পরে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিলেও হাদি যাননি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনে (মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানা) স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে কয়েক মাস ধরেই মাঠে তৎপর ছিলেন হাদি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে আক্রান্ত হন তিনি। এই হামলার জন্য পতিত আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন তার সমর্থকেরা। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে পুলিশ যাকে চিহ্নিত করেছে, সেই ফয়সাল করিম মাসুদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা। হাদি হত্যামামলায় পুলিশ ১৪ জনকে আটক করলেও ফয়সাল করিম এখনো ধরা পড়েননি।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com