শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫ ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫
 
বিদেশ
যে কারণে ৮৩ শতাংশ নতুন ভোটার জোহরান মামদানির পক্ষে





পালাবদল ডেস্ক
Thursday, 31 July, 2025
12:52 AM
 @palabadalnet

নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। ফাইল ছবি

নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। ফাইল ছবি

নিউইয়র্কের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জোহরান মামদানি। জয়ী হলে তিনিই হবেন ঐতিহ্যবাহী নগরীর প্রথম, মুসলিম মেয়র। এটা এখন পুরনো খবর। নতুন খবর হলো, ফিলিস্তিনের পক্ষ নেওয়ার কারণেই অসংখ্য নতুন ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছেন তিনি। বুধবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

সাম্প্রতিক জরিপ মতে, ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রাইমারিতে প্রথমবার ভোট দিতে আসা মার্কিনিদের কাছে মামদানির ফিলিস্তিনপন্থি মনোভাব বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের ৮৩ শতাংশ ফিলিস্তিন নিয়ে মামদানির মনোভাবের কারণে তাকে ভোট দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তাদের মতে, ফিলিস্তিনি মানুষ ও ফিলিস্তিনের স্বার্থরক্ষায় মামদানির দেওয়া নানা বক্তব্য তাদেরকে ওই নেতার প্রতি সমর্থন জানাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

সার্বিকভাবে, মামদানিকে ভোট দেওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল জীবনযাত্রার খরচ কমানো ও ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপের অঙ্গীকার।

‘ডেটা ফর প্রগ্রেস’ নামের প্রগতিশীল গবেষণা সংস্থা এই জরিপের আয়োজন করে। গত মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং পলিসি প্রজেক্ট এই জরিপের ফল প্রকাশ করেছে।

নিউইয়র্কের যেসব বাসিন্দা এর আগে কখনো ভোট দেননি, তাদের বেশিরভাগই বলেছেন মামদানির ফিলিস্তিনপন্থি নীতি তাদেরকে ভোটকেন্দ্রে টেনে নিয়েছে। সংখ্যায় তারা হাজার দশেকের কম নন। সব মিলিয়ে, মামদানিকে ভোট দেওয়ার কারণের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে ‘ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সমর্থন’। জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ ভোটার একে শীর্ষ কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

মামদানি বরাবরই বলে এসেছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারে বিশ্বাস ও সমর্থন তার ব্যক্তি-পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের কড়া সমালোচনা করেছেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাংবাদিকরা তাকে তার এই অবস্থান নিয়ে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেছেন। জবাবে তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল। পাশাপাশি এটাও জানাতে ভুলেননি-তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশান্স (বিডিএস)' উদ্যোগকে সমর্থন করেন।

২০০৫ সালে ১৭০টির বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজ সংস্থা এই শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ চালু করে।  এই উদ্যোগের লক্ষ্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মানতে বাধ্য করা, অবৈধ অধিগ্রহণ বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবলম্বন করা নীতিতে পরিবর্তন আনা।

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবেন মামদানি

নিউইয়র্কের মাটিতে পা রাখলেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করা হবে। এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী মামদানি। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে তার।

ফিলিস্তিনিদের 'ইন্তিফাদাকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিন' স্লোগানের প্রতি নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেন মামদানি। যার ফলে, তার বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে। তবে পরবর্তীতে কিছুটা সুর পাল্টান তিনি।

ফিলিস্তিনপন্থি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আইএমইইউ পলিসি প্রজেক্টের অপর এক জরিপে জানা গেছে, ৭৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। ৭৯ শতাংশ মানুষ ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র পাঠানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে মত দিয়েছেন এবং ৬৩ শতাংশ মানুষ ভাবছেন কোনো কারণে নিউইয়র্ক ঘুরতে এলে নেতানিয়াহুকে অবশ্যই গ্রেফতার করা উচিত।

প্রাইমারিতে ভোট দিয়েছেন এমন ৫৩১ ভোটার এই জরিপে অংশ নেন। এই জরিপের ক্ষেত্রে চার শতাংশ পর্যন্ত ভুল গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

এ মাসের শুরুতে অপর এক জরিপের ফলে জানা যায়, নিউইয়র্কের ৩০ শতাংশ ভোটার বলছেন তারা ইসরায়েল প্রসঙ্গে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি জানার পর তার প্রতি ঝুঁকেছেন। মেয়র নির্বাচনে তাকেই ভোট দেবেন এই ভোটাররা।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে সুর-বদল

বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির জয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে সুর বদলের আভাস দিয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে দলের নেতা-কর্মীরা ইসরায়েলকে ‘অন্ধ-সমর্থন’ দিয়ে গেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিনিদের মনোভাবে বড় পরিবর্তন এসেছে। অসংখ্য মার্কিন নেতা, ইহুদি ধর্মাবলম্বী ও ধর্মীয় নেতারাও গাজায় ইসরায়েলের সহিংসতায় শিউরে উঠেছেন। গাজার মানবিক সংকট নিরসনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।

আইএমইইউ পলিসি প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক মার্গারেট দেরিউস বলেন, “অনেক আমেরিকান যে বেদনা অনুভব করছে, তার সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করতে না পারলে ডেমোক্র্যাটরা ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নির্বাচনেই জিততে পারবে না।”

“এটা শুধু জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া, ভঙ্গুর সুরক্ষানীতির বেদনা নয়। এই বেদনা আসল। আমাদের কাছ থেকে করের মাধ্যমে আদায় করা অর্থ খরচ করে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাচ্ছে ইসরায়েল-এটা সেই সহিংসতা চেয়ে চেয়ে দেখার বেদনা।”

কয়েকজন প্রথাগত ইসরায়েলপন্থি ডেমোক্র্যাট নেতা মামদানির দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন পেনসিলভানিয়ার ইহুদি গভর্নর জশ শাপিরো। তিনি ইসরায়েল-বিরোধী মনোভাবের কারণে মামদানির প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

তবে মুদ্রার বিপরীতও রয়েছে। শিকাগোর সাবেক মেয়র রাহাম ইমানুয়েল এর আগে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ নিয়ে চিন্তিত নিউইয়র্কবাসীর উদ্বেগকে পাত্তা না দেওয়ার জন্য মামদানির সমালোচনা করেছিলেন। তবে তিনিও সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তিনি নেতানিয়াহুকে ‘কৌশলগত, নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া’ বলে অভিহিত করেন।

‘গাজায় কেউ ক্ষুধার্ত নেই’, নেতানিয়াহুর এই দাবির বিপরীতে এমন কঠোর বক্তব্য দেন ইহুদি ধর্মাবলম্বী ডেমোক্র্যাট নেতা ইমানুয়েল।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com