শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫ ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২
শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫
 
বিদেশ
গাজায় ‘কৌশলগত যুদ্ধবিরতির’ ঘোষণা ইসরায়েলের





পালাবদল ডেস্ক
Sunday, 27 July, 2025
9:03 PM
 @palabadalnet

জিকিম সীমান্ত ক্রসিং হয়ে উত্তর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের পর ফিলিস্তিনিরা ময়দার বস্তা সংগ্রহ করছেন। ছবি: এএফপি (২৭ জুলাই, ২০২৫)

জিকিম সীমান্ত ক্রসিং হয়ে উত্তর গাজায় ত্রাণ প্রবেশের পর ফিলিস্তিনিরা ময়দার বস্তা সংগ্রহ করছেন। ছবি: এএফপি (২৭ জুলাই, ২০২৫)

বেশ কিছুদিন ধরেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সইতে হচ্ছে ইসরায়েলকে। বিশেষত, ত্রাণ প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপের পর বড় আকারে সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি। অবশেষে, ত্রাণ প্রবেশ সহজ করতে গাজার কিছু জায়গায় চলমান যুদ্ধে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, যুদ্ধে দৈনিক কৌশলগত বিরতি গাজায় ক্ষুধার সমস্যা মেটাতে সহায়ক হবে। এই উদ্যোগের ফলে জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সড়কপথে নিরাপদে খাবার ও সহায়তা পাঠাতে পারবে।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, গাজায় আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশ করানোর জন্য তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইসরায়েলের ঘোষণার পর জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার সকল ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, গাজার ২১ লাখ মানুষকে তিন মাস খাওয়ানোর মতো খাবার তাদের হাতে আছে বা খুব শিগগির হাতে এসে পৌঁছাবে।

জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ বিষয়ক সমন্বয়ক টম ফ্লেচার সামাজিক মাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের এই ‘মানবিক বিরতি’র প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, “আমি গাজায় অবস্থানরত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি যাতে ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে দ্রুত খাবার পৌঁছানো যায়।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এক বিবৃতিতে জানায়, “ত্রাণই গাজার বেশিরভাগ মানুষের খাদ্যের একমাত্র উৎস।”

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ বেশ কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে এবং প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার মানুষ ‘দুর্ভিক্ষের মতো’ পরিস্থিতিতে আছে এবং দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায়, গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মাসে প্রায় ৬২ হাজার টন খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। 

সংস্থাটি জানায়, রোববার ইসরায়েল যে ‘বিরতির’ ঘোষণা দিয়েছে, তার অংশ হিসেবে তারা গাজায় আরও বেশি খাদ্যবহনকারী ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং জানিয়েছে, ট্রাকগুলোকে সীমান্তে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হবে, ট্রাকবহরের কাছাকাছি “কোনো সশস্ত্র বাহিনী“ উপস্থিত থাকবে না এবং কোনো ধরণের গোলাগুলির ঘটনা ঘটবে না।

“আমরা আশা করি এসব উদ্যোগের সামগ্রিক ফল হিসেবে আর কোনো ধরনের বিলম্ব ছাড়াই গাজায় খাবারের প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে“।

এর আগে এএফপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাময়িকভাবে যুদ্ধ বন্ধ রাখার এই ঘোষণা আল মাওয়াসি, দেইর আল বালাহ ও গাজা সিটির মতো নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কার্যকর হবে।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এসব এলাকায় বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) আরও বলেছে, তারা গাজা উপত্যকায় উড়োজাহাজ থেকে খাবার ফেলতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও অস্বীকার করেছে তারা।

ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার মধ্যে কিছু নিরাপদ রাস্তা খুলে দিয়েছে, যাতে জাতিসংঘ আর ত্রাণ সংস্থাগুলো খাবার আর ওষুধ নিয়ে নিরাপদে যেতে পারে এবং সেগুলো মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে পারে।

গত ২ মার্চ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।

এই পরিস্থিতিতে, গাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট সৃষ্টি ও ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

অবশেষে মে মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়।

ইসরায়েল আকাশপথে সাতটি খাবারের চালান পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলেছে তারা আবার ত্রাণ সরবরাহ শুরু করবে। আর যুক্তরাজ্য বলেছে, সহায়তার বিষয়ে তারা জর্ডানসহ বিভিন্ন মিত্র দেশের সঙ্গে মিলে কাজ করবে।

ফিলিস্তিনের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ বলেছে, শুধু গত শনিবারেই ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিতে ৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ত্রাণের জন্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে অপেক্ষা করার সময় হামলার শিকার হয়েছেন।

ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজার মধ্যে কিছু নিরাপদ করিডোর তৈরি করেছে, যাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থা খাবার আর ওষুধ নিয়ে নিরাপদে যেতে পারে এবং সেগুলো মানুষদের মাঝে বিতরণ করতে পারে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৭৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2025
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com