১৭ বছর অপেক্ষার পর প্রথমবার আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন-গত ৩ জুন এমন আনন্দঘন মুহূর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিরাট কোহলি গেয়েছিলেন টেস্টের জয়গান। বলেছিলেন, আইপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি হলেও টেস্ট ক্রিকেটকে এর চেয়ে অনেক ওপরে স্থান দেন তিনি। কতটা ওপরে-তা বোঝাতে আইপিএল ট্রফিকে টেস্টের চেয়ে পাঁচ ধাপ নিচে বলেও মন্তব্য করেন কোহলি।
ভারতের ব্যাটিং তারকার এমন টেস্ট-আসক্তির বিপরীতে ভিন্ন বাস্তবতা শুনিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার বলেছেন, ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে টেস্ট ক্রিকেট উপার্জনের ভালো মাধ্যম হলেও ক্যারিবিয়ানদের জন্য বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৮৪ টি-টোয়েন্টি ও ৫৬ ওয়ানডে খেলা রাসেল ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের পরিচিত মুখ। প্রতিবছর দুই-তিনটি বা এরও বেশি টুর্নামেন্টে খেলে থাকেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন ক্রিকেটার ১০ বা এর বেশি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট (যেসব টুর্নামেন্টে ৫ বা এর বেশি দল) জিতেছেন, তাদের একজন রাসেল।
সম্প্রতি ভারতে আইপিএল শেষ করে রাসেল এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সেখানে গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোহলির টেস্ট-প্রীতির প্রসঙ্গ ধরে রাসেল বলেন, ‘“আমি মনে করি আপনি যদি ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো দেশ থেকে আসেন, যেখানে টেস্ট খেলোয়াড়দের যত্ন নেওয়া হয়, তাহলে সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।”
কতটা আলাদা বোঝাতে গিয়ে রাসেল যোগ করেন, “এই খেলোয়াড়েরা টেস্ট ক্রিকেট খেলতে মোটা অঙ্কের কেন্দ্রীয় চুক্তি পায়, বড় মঞ্চে খেলার সুযোগ পায়। হ্যাঁ, তারাও খেলতেই চায়। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়? আপনি হয়তো ৫০ বা ১০০টা টেস্ট খেলবেন, কিন্তু অবসরের পর দেখবেন, দেখানোর মতো বিশেষ কিছু নেই।” রাসেলের মতে, বেঁচে থাকার জন্য উপার্জনটা মুখ্য বিষয়, “অবশ্যই আপনি চাইবেন এমন একটা জীবন, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচা যায় এবং পরিবারকে ভালোভাবে দেখাশোনা করা যায়।”
রাসেলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১০ সালের নভেম্বরে, আর সেটা টেস্টেই। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা ওই অভিষেক টেস্টই তার ক্যারিয়ারের একমাত্র। আর কখনো সাদা পোশাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রতিনিধিত্ব করা হয়নি তার। ‘কখনোই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর’ না নেওয়ার কথা জানিয়ে জ্যামাইকার এই ক্রিকেটার বলেন, ‘“আমাকে কার্যত টেস্ট দল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাকে সাদা বলের খেলোয়াড় হিসেবেই দেখেছিল, ব্যস সেটাই ছিল বাস্তবতা।”
দ্বিতীয় টেস্ট খেলার সুযোগ না পাওয়া রাসেল ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনেক স্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন। যার মধ্যে আছে ম্যাচ জেতানো অনেক দর্শনীয় ছক্কা। রাসেল তার সেই সব ছক্কা আর ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জয়ের কিছুটা বিনিময়ে টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় সুযোগ পাওয়াকে বেছে নিতেন কি না জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, “সত্যি বলতে ‘না’। আমি টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বাস করি, কিন্তু দিনের শেষে আমি একজন পেশাদার। এটা আমার যাত্রার অংশ ছিল না। আমার কোনো আফসোস নেই। কারণ, আমি নিজে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিইনি।”