ঢাকা: ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন সংস্করণে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশন করে। ডেইলি স্টার লিখেছিল,আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিষয়টি তিনি মোদির উপরেই ছাড়ছেন। আসলে ব্যাপারটি ছিল অন্যরকম।
এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, “বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কি? কারণ এটা স্পষ্ট যে বাইডেন প্রশাসনের আমলে মার্কিন ডিপ স্টেট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমন কী, মুহাম্মদ ইউনূসও জুনিয়র সরোসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?”
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডিপ স্টেট’ বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের সদস্যদের, বিশেষ করে এফবিআই ও সিআইএর কর্মকর্তাদের গোপন নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়ে থাকে। গোপন এই নেটওয়ার্কে অনির্বাচিত সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী লোকজন থাকেন। রাজনৈতিক সরকারের সমান্তরালে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্বাধীনভাবে এই নেটওয়ার্ক কাজ করার চেষ্টা করে থাকে।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “সেখানে (বাংলাদেশে) আমাদের ‘ডিপ স্টেটের’ কোনো ভূমিকা ছিল না...এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (মোদি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। স্পষ্ট করে বললে কয়েক শ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আমি বিষয়টি সম্পর্কে পড়ছি। তবে বাংলাদেশের বিষয়ে (বলার ভার) আমি প্রধানমন্ত্রীর (মোদি) ওপর ছেড়ে দেব।”
আসলে ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি। ‘বাংলাদেশের বিষয়ে ‘ডিপ স্টেটের’ কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা ব্যাপারটা ‘আমি মোদির উপরেই ছাড়তে চাই’ বলে আসলে তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ভার মোদির উপর ছেড়েছেন। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের বিষয়টি পুরোপুরি ভারতের উপর ছেড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। মোদি কিন্তু এই নিয়ে আর কথা বলেননি। এর পর ট্রাম্প ইউক্রেন প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
এই নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার আজ রাতে পত্রিকাটি অনলাইনে একটি ব্যাখ্যা দেয় এবং দুঃখ প্রকাশ করে। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত খবরটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
“ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য পাঠক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আমরা বুঝতে পেরেছি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা বলেছেন সেটি আমাদের প্রতিবেদনে ভুল ও বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করে ভুলের কারণ চিহ্নিত করেছি এবং আমাদের ডিজিটাল নিউজরুমে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে এমন ভুল আর না হয়।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে এবং দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সকল ফোরামে আমাদের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় অখণ্ডতা ও ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
এই ত্রুটির জন্য আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমাদের প্রতি পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের সমালোচনা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করছি।
আমরা সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ড ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বজায় রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।