প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বৃহস্পতিবার টোকিওতে নিক্কেই ফোরাম ফিউচার অব এশিয়ার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং তাদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে ৩০তম নিক্কেই ফোরামে ‘ফিউচার অব এশিয়া’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পরে ফোরামের প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রশ্নোত্তর পর্বে তার এই কথোপকথন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। প্রথমটি হচ্ছে সংস্কার, দ্বিতীয়টি হলো যারা অপরাধ করেছে (জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে) তাদের বিচার এবং তৃতীয়টি হলো নির্বাচন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা জনগণকে বলছি, নির্বাচন এ বছরের শেষে ডিসেম্বরে অথবা সর্বোচ্চ আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।” তবে কিছু রাজনীতিবিদ নির্বাচনের জন্য জুন পর্যন্ত অপেক্ষা কেন, ডিসেম্বেরই নির্বাচন কেন নয়, সেই প্রশ্ন তুলছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কখন হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সংস্কার কতটা সম্পন্ন করা হচ্ছে, তার ওপর উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি দেশকে আগের অবস্থায়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের অবস্থায় রেখে যেতে চাই, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলতে পারি। আমরা যদি খুব তড়িঘড়ি করি, কিছু সংস্কার করি এবং অন্যান্য সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা এটা (নির্বাচন) ডিসেম্বরে করতে পারি। তবে আমাদের যদি ভালো সংস্কার দরকার হয়, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।”
কিন্তু কিছু ব্যক্তি সংস্কার রেখে নির্বাচন শেষ করতে বলছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল এটা বলছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন যে তার কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বললেন। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে। গত বুধবার ঢাকায় বিএনপির এক সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে।
নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থার সাম্প্রতিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে একটি পরিবর্তন ঘটেছে এবং এরপর তাঁর সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আমাদের জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে, ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং জনগণের মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এটি আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করার, নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার একটি সুযোগ।”
বহুমুখী অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার ভূমিকা রেখে চলেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে। তিনি বলেন, বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এশিয়া অনিশ্চয়তার কেন্দ্রস্থলে, একই সঙ্গে সম্ভাবনারও কেন্দ্রে।