বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫
 
আইন-আদালত
আবরার হত্যা: ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন হাইকোর্টে বহাল





নিজস্ব প্রতিবেদক
Sunday, 16 March, 2025
12:50 PM
 @palabadalnet

আবরার ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত

আবরার ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এই রায় দেন।

মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), জেল আপিল ও আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছিলেন। আজ রায় ঘোষণা করলেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, রায়ে তারা আপাতত সন্তুষ্ট। তবে এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আবরারের বাবা রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।’

অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

ফৌজদারি কোনো মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যেটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করতে পারেন। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও এসব আপিলের ওপর একসঙ্গে হাইকোর্টে শুনানি হয়ে থাকে।

মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল ও আপিল করেন। পৃথক জেল আপিল গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে ওঠে। সেদিন আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। পাশাপাশি নিয়মিত আপিল করেন কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা। আসামিদের এই ডেথ রেফারেন্স, জেল আপিল ও আপিলের ওপর হাইকোর্টে একসঙ্গে শুনানি হয়।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুনানি শুরু করে। এরপর পেপারবুক থেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় শুনানি হয়। সেদিন থেকে মধ্যে এক দিন ছাড়া প্রতি কার্যদিবসে শুনানি হয়। সবশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী ও রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ শুনানিতে ছিলেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন।

বিচারিক আদালতের রায় কার কী সাজা

প্রায় চার বছর আগে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিরা সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা-কর্মী।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন-মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। তখন ৩ জন পলাতক ছিলেন। তারা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালান বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।

আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার।

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারকে আবাসিক হলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী পিটিয়ে হত্যা করে। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ জন বুয়েট শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : palabadal2018@gmail.com