ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাদের আসামি গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তারাও এ গ্রেফতারের ক্ষমতা পাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল-১) কার্যবিধি, ২০১০-এর সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবে প্রসিকিউটরদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই কার্যবিধিতে আরও কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। তারপর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের দুটি সংশোধন আনা হয়েছে। আর ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধির সংশোধন আনার এটিই প্রথম উদ্যোগ।
ট্রাইব্যুনালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, চিফ প্রসিকিউটরসহ মোট ১৪ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। কো-অর্ডিনেটরসহ তদন্ত সংস্থায় ২৩ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। আইন অনুযায়ী, প্রসিকিউটররা তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাস্তবায়ন করতে পারেন। সংশোধন করে পরোয়ানা কার্যকরের ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া প্রসিকিউটর বা তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবেন।
কার্যবিধি অনুযায়ী, গ্রেফতার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করতে হয় পুলিশকে। এখানে পরিবর্তন এনে বলা হচ্ছে, গ্রেফতার করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ বা তদন্ত কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনাল বা যেকোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আসামিকে হাজির করবেন।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বলছে, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা একান্তভাবে ট্রাইব্যুনালের। যেহেতু বিধি আগে থেকেই আছে, তাই অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচারকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবেন ট্রাইব্যুনাল। তা ছাড়া ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন আনা হয়েছে, সেটার জন্যও প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। ট্রাইব্যুনাল কোনো সংশোধনী আনলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধির দ্রুতই সংশোধন আনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কার্যবিধির সংশোধন এলে তদন্তপ্রক্রিয়া সহজ হবে, যা বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নিজস্ব অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তারা সহযোগিতা করবেন, যখন তদন্ত কর্মকর্তা আসামি গ্রেফতারে যাবেন। তা ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা গ্রেফতারে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সহযোগিতা করবেন।
আরও যেসব সংশোধন আসছে
কার্যবিধির সংশোধনী এনে ট্রাইব্যুনালের কিছু ক্ষমতা কমানো হচ্ছে। এখন ট্রাইব্যুনাল নির্দেশিত প্রথম শ্রেণির কোনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জবানবন্দি নেওয়া হয়। জবানবন্দি গ্রহণের সময় ভুক্তভোগীর আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারেন। যদিও সেই আইনজীবী কথা বলা বা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না জবানবন্দির সময়। এই দুটি ধারা বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে বিধির ২৪-এর ২ উপবিধিতে বলা হয়েছে, তদন্ত সংস্থার কোনো সদস্য যেকোনো প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ধারা বহাল রাখা হতে পারে।
তদন্ত চলার পাশাপাশি বিচার চলার সময় ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিধানও বিধিতে যুক্ত হতে পারে। জব্দ করা যেকোনো বস্তুর বিষয়ে যথাযথ সংস্থার বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন তদন্ত কর্মকর্তা-এ বিষয়ও যুক্ত হতে পারে।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় বলছে, এসব সংশোধনী এলে তা বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।