রবিন হান্ডা অভিযোগ করেছেন, তাদের হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল। ছবি: বিবিসি
অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া এবং পায়ে বেড়ি পরিয়ে সামরিক বিমানে করে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনা আলোড়ন তৈরি করেছে ভারতজুড়ে। অভিবাসীদের অনেকেই নিজেদের দুরবস্থার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বলেছেন, সফরকালে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টা কীভাবে কেটেছে তাদের।
হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার বাসিন্দা খুশপ্রীত সিং ছয়মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। খরচ হয়েছিলেন ৪৫ লাখ টাকা যা জোগাড় করতে তার বাবা নিজের গবাদি পশু, জমি ও বাড়ি বন্ধক দেন।
খুশপ্রীত সিং ২২ জানুয়ারি সীমান্ত অতিক্রম করেন। দোসরা ফেব্রুয়ারি তাকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা শুরু হয়।
তিনি বলেছেন, “পানি খেয়ে জঙ্গল পার হও। যে পিছনে রয়ে যাচ্ছে, তাকে পেছনে ফিরে দেখার দরকার নেই। শুধু নিজের পথ ধরে এগিয়ে চলো। যে গাইডের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলতে পারবে, একমাত্র সেই পার হতে পারবে। যে পিছনে পড়ে থাকল, সে চিরতরে পেছনেই পড়ে থাকবে।”
তবে শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ার পর খুশপ্রীত সিংকে ১২ দিন ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছিল।
সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ১৮ বছর বয়সী খুশপ্রীত বলেছেন, “প্রথম দিন ওরা বলেছিল, আমাদের ভারতে ফেরত পাঠাবে। ভেবেছিলাম আমাদের সঙ্গে মজা করছে। ওদের গম্ভীর দেখালেও আমরা ভেবেছিলাম ওরা মশকরা করছে।”
“ওরা যখন আমাদের হাতকড়া পরায়, তখন আমরা ঘটনা অনুধাবন করতে শুরু করি। প্রথমে জানায় যে আমাদের ওয়েলকাম সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম সেখানে পৌঁছানোর পর ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু নামার পর দেখলাম, সামনে সামরিক বিমান দাঁড়িয়ে।”
এসব অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন খুশপ্রীত সিং।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে করে যে ১০৪ ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়, তাদের একজন এই তরুণ।
তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয় করে ফেলেছে তার পরিবার। খুশপ্রীতের আশা, “সব হারিয়েছি। যদি টাকা ফেরত পাই তাহলে এখানেই কিছু একটা কাজ করব। আর বাইরের দিকে তাকাব না।”
তার বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিক। পুরোটা না হলেও অন্তত অর্ধেক দিক।”
‘রাস্তায় মৃতদেহ পরে থাকতে দেখেছি’
পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরের বাসিন্দা সুখপাল সিং জানিয়েছেন, জঙ্গল ও সমুদ্র পথ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন তিনি। যেতে খরচ হয়েছিলো ৪২ লাখ টাকা।
বিবিসির সংবাদদাতা প্রদীপ শর্মাকে তিনি জানিয়েছেন, চার মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। পথে আসে নানান সমস্যা।
তিনি বলেছেন, “আমি সবাইকে হাতজোড় করে বলতে চাই, ভুল পথ ধরে ওখানে কেউ যাবেন না এবং সম্ভব হলে ওখানে যাবেনই না। এখানে যদি সামান্য খাবার পান, তাহলে সেটাই খান। ওখানে খাবার নেই, টাকা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, নিরাপত্তাও নেই।”
যে এজেন্টের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পৌঁছাবেন ভেবেছিলেন, তাদের বিষয়ে মি. সিং বলেন, “ওরা প্রথমে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যায়, তারপর লাতিন আমেরিকায়। আমরা প্রায় ১৫ ঘণ্টা নৌযাত্রা করেছি। পাহাড়ি পথে, ৪৫ কিলোমিটার হেঁটেছি। সেখানে যারা পড়ে যায়, তাদের সেখানেই রেখে দেয় ওরা। পথে অনেক মৃতদেহ দেখেছি আমরা।”
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন
হোসিয়ারপুর জেলার দাসুয়া শহরের বাসিন্দা হরবিন্দর সিংয়ের অভিজ্ঞতাও একইরকম। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে তাকে দিল্লি, তারপর কাতার এবং সেখান থেকে ব্রাজিলে নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, “ব্রাজিলের একটা হোটেলে দুই দিন ছিলাম। ওরা বলেছিল পেরু থেকে বিমানে যাব। কিন্তু আমরা বাসে করে পেরু গিয়েছিলাম। কোনো বিমানই ছিল না। পরের রাস্তাও ট্যাক্সি করেই গিয়েছিলাম।”
“পানামায় পৌঁছানোর পর আমরা আটকে যাই। সেখানে এক-দু'জনের মৃত্যু হয়। একজন সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল, অন্যজন জঙ্গলে মারা যায়।”
‘অপরাধীর মতো আচরণ করা হয়’
হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের বাসিন্দা রবিন হান্ডা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করার পর উন্নত ভবিষ্যতের খোঁজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চেয়েছিলেন।
হরিয়ানার বিবিসির সংবাদদাতা কমল সাইনিকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি।
রবিন হান্ডা বলেন, “সাত মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছিলাম। পথে বিভিন্ন জায়গায় আমাকে আটকানো হয়। নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। কখনও খাবার পেয়েছি, কখনও পাইনি। কখনও সমুদ্রে, কখনোবা নৌকায় চড়ে গিয়েছি। লোকে আমার টাকাও কেড়ে নিয়েছে।”
“২২ জানুয়ারি সীমান্ত অতিক্রম করে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার পর সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করি। ওরা আমাদের একটা শিবিরে নিয়ে যায়। সেখানে ওরা আমাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করে।”
“ক্যাম্প থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তাও জানানো হয়নি আমাদের। হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সামনে সেনাবাহিনীর বিমান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই।”
“কেউ এইভাবে বাইরে যাক, সেই পরামর্শ কখনোই দেব না। পথটা খুবই কঠিন।”
রবিন হান্ডার বাবা জানিয়েছেন, ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে ৪৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি।
তার কথায়, “এজেন্সি আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ওরা বলেছিল ছেলে এক মাসের মধ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু ছয়-সাত মাস ধরে ওকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি বৈদ্যুতিক শকও দিয়েছে।”
ঘটনার প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন রবিন হান্ডার বাবা।
তিনি বলেন, “ছেলেকে মারধরের ভিডিও আমাদের কাছে আছে। ভালো চাকরি পাবে এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে জমিও বিক্রি করেছিলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি।”
‘বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও পাঠিয়ে দিয়েছে’
পাঞ্জাবের লুধিয়ানার বাসিন্দা মুস্কান তিন বছরের স্টাডি ভিসায় ব্রিটেনে গিয়েছিলেন। তার দাবি, ভিসার মেয়াদ শেষ হতে এখনও দুই বছর বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই বেড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান তিনি। সেখানে যাওয়া মাত্রই তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়।
বিবিসির সহযোগী সাংবাদিক গুরমিন্দর গ্রেওয়াল জানিয়েছেন ২০২৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী।
মুস্কানের কথায়, “আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার তুহাওয়ানায় ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। পথে পুলিশ আমাদের থামিয়ে জানায়, এসে আমাদের নিয়ে যাবে তারা। তারা আমাদের ১০ দিন রেখে দেয় এবং খুব ভালো ব্যবহার করেছিল।”
“এড়পর তারা আমাদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়। আমরা যে ভারতে চলে এসেছি সেটা বুঝতে পারি এখানে পৌঁছানোর পর। আমরা বৈধ ভিসায় গিয়েছিলাম, তা সত্ত্বেও এখানে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। আমরা কিন্তু কোনো সীমানা অতিক্রম করিনি বা কোনো দেয়ালও টপকাইনি।”
তিনি বলেন, “আমার এখনও বৈধ ব্রিটিশ ভিসা আছে। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে যে পাঁচ বছরের জন্য কোথাও যেতে পারব না।
মুসকানের বাবা জগদীশ কুমার বলেন, “আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওকে ঠেলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সরকারের উচিত এখন এই বিষয়ে নজর দেওয়া। ঋণ নিয়ে আমার সন্তানকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম।”
আম আদমি পার্টির বিধায়ক সরবজিৎ কৌর মানু ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। ওই বিধায়ক বলেছেন, “আমি এটা দেখে অবাক হয়েছি যে এই মেয়েটির কাছে এখনও দুই বছরের বৈধ ব্রিটিশ ভিসা রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।”
“ও তুহাওয়ানায় বেড়াতে গিয়েছিল। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেরাই তাকে সেখানে যেতে দিয়েছিল এবং তারপর এইসব ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।”
‘মাত্র ১১ দিন আগে পৌঁছেছিলাম’
পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার জসপাল সিং যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১১দিন কাটাতে পেরেছিলেন। বিবিসির গুরপ্রীত চাওলাকে তিনি বলেন, “আমার আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন আড়াই বছর আগে। এর জন্য ৮০ লাখ টাকা খরচ করেছেন।
২০২২ সালে ভিজিটর ভিসায় ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন তিনি। স্পেনে একজন পাঞ্জাবি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এরপর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ইউরোপে পৌঁছান তিনি। প্রায় ছয় মাস বিভিন্ন দেশে কাটানোর পর পানামার জঙ্গল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
যশপাল সিং বলেন, “গাধার পিঠে চড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল খুবই ভয়াবহ। পথের পাশে শুধু ছেলেদেরই নয়, মেয়েদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। কঙ্কাল দেখেছি। গোটা সফরে একটু রুটি আর দু-একটা বিস্কুট জুটেছিল।”
মার্কিন সীমান্ত অতিক্রম করার পর সামরিকবাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে।
যশপাল সিং বলেছেন, “আমাদের নানাভাবে হয়রান করা হয়েছে। বিমানে ওঠার পর হাত-পা বেঁধে দেয়। বিমান অনেক জায়গায় থেমেছিল। কিন্তু অমৃতসর পৌঁছনোর পরেই আমাদের হাত-পায়ের বাঁধন খোলা হয়।”
৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে
পাঞ্জাবের ফতেগড় সাহিব জেলার জসবিন্দর সিং ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তার কাকা কর্নেল সিং বিবিসিকে বলেন, “গভীর রাতে পুলিশ কর্মকর্তারা জসবিন্দরকে বাড়িতে দিয়ে যায়।”
সিং বলেছেন তার ভাইপো বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়েছিল।”
জসবিন্দর সিং ২২ দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছন এবং তারপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্নেল সিং বলছেন, “বাড়ি ফেরার পর থেকেই জসবিন্দরের শরীর খারাপ, হয়তো মানসিক চাপের কারণে।” সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে লুধিয়ানা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিং বলেছেন, “জসবিন্দর বাড়িতে জানিয়েছে ক্যাম্পে খাওয়ার জন্য কিছুই দেওয়া হতো না। শুধু অর্ধেক আপেল বা জুস দেওয়া হতো এবং সেটাও মাঝেসাঝে।”
জসবিন্দর সিংয়ের এক বড় ভাই রয়েছেন। তাদের কিছু জমিও আছে। দুই ভাই কৃষিকাজ করতেন। একজন এজেন্টের মাধ্যমে গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জসবিন্দর সিং। এর জন্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
সিং বলেন, “টাকা জোগাড় করতে সোনার গয়না বন্ধক দিয়েছিলাম এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে অনেক টাকা ধার করেছি।
বিতর্ক
শতাধিক অবৈধ অভিবাসী নিয়ে ওই বিমান অমৃতসর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় পাঁচই ফেব্রুয়ারি। ইতিমধ্যে তাদের হাতে-পায়ে বেড়ি বেঁধে সামরিক বিমানে তোলার বিষয়ও প্রকাশ্যে আসে। এরপরই নিন্দার ঝড় উঠতে থাকে।
অভিযোগ ওঠে, যেভাবে হাতকড়া এবং পায়ে বেড়ি পরিয়ে ভারতীয়দের সামরিক বিমানে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা 'অমানবিক'।
ঠিক একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের সামরিক বিমানে করে কলোম্বিয়ায় ফেরত পাঠিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। কিন্তু কলোম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি ওইভাবে ফেরত নিতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তার দেশের নাগরিকদের 'সম্মানের সঙ্গে পাঠাতে হবে'।
এরপর কলোম্বিয়া থেকে বিমান পাঠানো হয় এবং তাতে সওয়ার হয়েই দেশে ফেরেন ওই অবৈধ অভিবাসীরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠতে থাকে কেন কলোম্বিয়ার মতো নিজের দেশের নাগরিকদের 'সসম্মানে' ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা করল না ভারত?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'নৈকট্য' থাকা সত্ত্বেও কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো তা নিয়ে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরাও।
এরপর, বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সংসদে এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, এটা নতুন বিষয় নয়। এর আগেও অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিতর্ক কমেনি।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ ইয়াদভসহ বিরোধীরা এই ইস্যুতে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন।
রাহুল গান্ধী বলেছেন, “দেশে ফেরত আসা ভারতীয়দের যন্ত্রণার কথা প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে। ভারতীয়রা সম্মান ও মানবিক আচরণের যোগ্য, হাতকড়ার যোগ্য নয়।”
তীব্র বিরোধিতার মাঝে সংসদে এই প্রসঙ্গে বিবৃতি দেন ড. জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, “বিদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারী নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়া সব দেশের দায়িত্ব।”
তিনি যুক্তি দিয়েছেন, “স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে বহিষ্কৃতদের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিমানে নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ মানতে হয়।”
শৌচালয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীদের উপর কোনো বিধি নিষেধ ছিল না, খাওয়ার সময়েও না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মার্কিন সংস্থা আইসিই (ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ভারতকে জানিয়েছে নারী ও শিশুদের আটকে রাখা হয়নি।”
পাশাপাশি অবৈধভাবে অন্য দেশে পাঠানোর নেপথ্যে থাকা চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন।
তার বক্তব্য পেশের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, বিষয়টাকে 'লঘু' করে দেখানোর চেষ্টা করছে বিজেপি সরকার।