
ইসলামপন্থি আটদলের সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবির ব্যাপারে অনড় অবস্থানে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থি আটদল। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়া না হলে দেশে সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে না বলে সতর্ক করেছেন তারা।
মঙ্গলবার ঢাকার পল্টনে আয়োজিত সমাবেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ ইসলামপন্থি আটটি দলের শীর্ষনেতারা এসব কথা বলেছেন।
“যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ছাব্বিশ সালে কোনো নির্বাচন নাই। ছাব্বিশের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই,” সমাবেশে বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
সংসদ নির্বাচনের দিনেই একসঙ্গে গণভোট আয়োজনের যে দাবি বিএনপি'র পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, সেটির বিরোধিতা করেন বক্তারা।
”আজকে বাংলাদেশের ছাত্রজনগণ, সর্বশ্রেণির মানুষ আজকে জুলাই ভিত্তি আইনি সনদ প্রথম চাই; তারপর জাতীয় নির্বাচন চাই। কিন্তু আপনারা যদি এই জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করে থাকেন, আমাদের বাংলাদেশের তিনদিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, কিন্তু আপনারা পালাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে, সেই দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এছাড়া কিন্তু আপনাদের পালাবার কোনো জায়গা নেই,” বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
এদিকে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে জানা যাবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
ইসলামপন্থি দলগুলোর দাবি মেনে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন না করা হলে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
“আগামী ১৩ তারিখ জুলাই সনদের গণভোটকে কেন্দ্র করে সরকারি সিদ্ধান্তের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। সরকার যদি জনগণের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়। আবার বলছি, সরকার যদি আটদলীয় নেতৃবৃন্দের শান্তিপ্রিয় ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়, যেই ভাষায় বললে সরকার বুঝবে, আমরা সেই ভাষাই প্রয়োগ করবো,” সমাবেশে বলেন মি. হক।
ইসলামপন্থি আটদলের সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন জেলা থেকে তাদের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসেন। এতে সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ।
সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট হওয়া ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “একমত হয়ে যখন স্বাক্ষর করেছি সবাই, তখন গণভোট আগে হওয়াই হচ্ছে যুক্তিযুক্ত। এর মধ্যে দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ এবং এর ভিত্তিতেই আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
“এদেশের মুক্তিকামী মানুষের কথা একটাই- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে...গণভোটের ব্যাপারে সকল দল একমত। তাহলে তারিখ নিয়ে এই বায়নাবাজি কেন?” প্রশ্ন রাখেন শফিকুর রহমান।
ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন হওয়া নিয়ে জামায়াতের আপত্তি নেই বলে জানান দলটির শীর্ষ নেতা।
“আমরা চাই আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এইটা নিয়ে কেউ ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাবেন না। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে ফেলবেন না”
“সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে একটা চার্টার তৈরি হয়েছে। এটি হচ্ছে গণতন্ত্রের কথা যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ যা বলবে, বাকিরা তাই মেনে নেবে। কিন্তু আমরা দেখলাম না, কেউ কেউ তা মেনে নিতে রাজি নন। জুলাই সনদেই যদি আপনি গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখান, জাতীয় নির্বাচনে আপনি শ্রদ্ধা দেখাবেন কীভাবে,” বলেন জামায়াতের আমির।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই জায়গায় আসতে হবে। সকল বায়না ভুলে যান। জুলাই শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখান। জুলাইয়ে যারা লড়াই করেছে বুক তাক করে, যারা পঙ্গু-আহত হয়ে এখনও ধুকে ধুকে কষ্ট করছে। মেহেরবানি করে তাদের মুখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন।”
“আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, কোনো দলের নয়, জনতার বিজয় হবে ইনশাল্লাহ। জনতা কী চায়, কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। যারা এই ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন, তাহলে নিজের পরিণতির জন্য, যে বু্ঝতে ব্যর্থ হবেন, তাকে তৈরি থাকতে হবে,” বলেন শফিকুর রহমান।
দাবি আদায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে ভাষণে জানান জামায়াতের আমির। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আট দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতিও নিতে বলেন তিনি।
‘আবারও ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার ষড়যন্ত্র’
বিএনপিসহ যেসব দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চান না, তারা দেশে ”আবারও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে” বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
“যারা জুলাই সনদের গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিরোধিতা করছেন, আমরা তাদের সমস্যার কথা জানতে চাই। কোনো যুক্তি নাই, কোনো যুক্তি নাই। তারা জুলাই সনদের বাসবায়নকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ কায়েম করবার ষড়যন্ত্র করছে,” সমাবেশে বলেন মি. হক।
গণভোট অনুষ্ঠান ব্যতীত দেশে সংসদ নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
“অনতিবিলম্বে জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর প্রাথমিক আইনিভিত্তি প্রদান করতে হবে। এরপরে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদকে চূড়ান্ত আইনিভিত্তি প্রদান করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জুলাই বিপ্লবপন্থীরা সেটা বরদাশত করবে না, মানবে না।”
“আমরা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের, জুলাইয়ের বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী বীর শহীদানদের রক্ত মাড়িয়ে জুলাই বিপ্লবের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট ছাড়া বাংলার মাটিতে আমরা আর কোনোকিছুই হতে দেবো না,” বলেন খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের যে দাবি বিএনপি জানাচ্ছে, সেটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
“বিএনপি, তারা (গণ)ভোট চায়। কখন? জাতীয় নির্বাচনের দিন। বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে, আপনাদের উদ্দেশ্য ভালো না। যদি আপনাদের উদ্দেশ্য ভালোই হয়ে থাকে, যেখানে (জুলাই সনদের) আইনিভিত্তির ব্যাপারে আপনারা একমত পোষণ করেছেন, সেখানে গণভোটে এত গড়িমসি কেন? এটা জাতির কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে,” সমাবেশে বলেন রেজাউল করিম।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদেরকে আমরা বার বার অনুরোধ করছি। এর পরেও যদি আপানাদের শুভবুদ্ধি উদয় না হয়, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে আমরা কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।”
পালাবদল/এসএ